শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

চালক-সহকারীর সহায়তায় সক্রিয় পোশাক পণ্য চুরি চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

চালক-সহকারীর সহায়তায় সক্রিয় পোশাক পণ্য চুরি চক্র

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ চোর চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের রফতানি পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ায় র‍্যাব-৪ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে ৫ কোটি টাকা মূল্যের গার্মেন্টস পণ্য চুরি ও উদ্ধারের বিষয়টি বিস্তারিত জানান র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা।


বিজ্ঞাপন


গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. রিপন ওরফে ছোট রিপন (৪৩), মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে ছোট বিল্লাল (৩৬), নাঈম ইসলাম (২৭), মো. আকাশ (২৬), মো. সুমন (৩০), মো. ফরিদ (৩৮) ও মো. মঞ্জুর হোসেন জিকু (৩৮)।

আব্দুর রহমান জানান, গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি বন্দর থানার লাঙ্গলবন্দস্থ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৪ এর একটি দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের চোরাইকৃত ২৬ হাজার ৯৯৫ পিস তৈরি পোশাক পণ্য এবং একটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।

arrest-3র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, চক্রটি ২৬ জানুয়ারি বিকেলে ফ্যাক্টরি থেকে পণ্য কাভার্ডভ্যানে লোড করে তেজগাঁওয়ে গিয়ে কাভার্ডভ্যানে ফুয়েল নিয়ে পাম্পে গাইডের জন্য কিছুক্ষণ অবস্থান করে। গাইড নাঈম ওই স্থানে এসে মূলহোতা রিপনের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দস্থ ভাইভাই টিম্বার স’মিল এর টিনশেড গোডাউনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা বিল্লাল হোসেন, মো. ফরিদ এবং মঞ্জুরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন বিশেষ কৌশলে কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ডভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু গ্যানিং মেশিনের মাধ্যমে কেটে প্রত্যেক কার্টুন গোডাউনের ভেতর নামায়। কার্টুন থেকে মালামাল চুরির সময় ২৭ জানুয়ারি ভোররাতে কাভার্ডভ্যানটির চালক, সহকারী, ‘স’ মিল মালিক, লেবার সর্দারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের ভাষ্যমতে মাস্টারমাইন্ড রিপন ও বিল্লাল কিছু সময়ের মধ্যে চোরাইকৃত পণ্যগুলো বুঝে নিতে আসলে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আসামি রিপন ওই চক্রের মূলহোতা। সে প্রথম জীবনে ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসে সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। সে ২০০৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে চলে যায়। ২০১৭ সালে দেশে ফিরে এসে রেন্ট এ কারের চালক হিসেবে কাজ করার সময় পোশাক পণ্য চোর চক্রের হোতাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে অধিক লাভের আশায় গ্রেফতারকৃত আসামি রিপন নিজেই বিল্লাল হোসেন, নাঈম ইসলাম, আকাশ, সুমন, ফরিদ, মঞ্জুর হোসেন জিকুসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জনকে নিয়ে একটি সক্রিয় আন্তঃজেলা চোর চক্র তৈরি করে।


বিজ্ঞাপন


গ্রেফতার বিল্লাল মূলহোতা রিপনের প্রধান সহযোগী। মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় চোরচক্রের মূলহোতা রিপনের সঙ্গে বিল্লালের পরিচয় হয়। বিল্লালের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায়। চুরির ঘটনাগুলো যেহেতু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সংঘঠিত হয়ে থাকে তাই মূলহোতা রিপন আসামি বিল্লালকে গোডাউন ভাড়া করার কাজের প্রস্তাব দেয়। তখন থেকেই বিল্লাল গোডাউন ভাড়া করার বিষয়টি দেখে আসছে। মূলহোতা রিপন গার্মেন্টস পণ্য চুরির জন্য যখন কোন একটি কাভার্ডভ্যান নির্ধারণ করে আসামি নাঈমকে অবগত করেন। পরে ওই কাভার্ডভ্যানটি ঢাকা থেকে পূর্ব নির্ধারিত গোডাউনে পৌঁছানো এবং গার্মেন্টস পণ্য চুরির সময় গোডাউনের আশপাশে নজরদারিসহ সার্বিক দায়িত্বে থাকতো।

arrest-2গ্রেফতারকৃত ফরিদ প্যাকেজিং করার কাজে অত্যন্ত দক্ষ হওয়ায় সে কার্টুন থেকে মালামাল বের করে পুনরায় কার্টুন প্যাকেজিং করতো। গ্রেফতারকৃত মঞ্জুর গোডাউনের মালিক এবং ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি। তিনি কাছে থাকা গ্যানিং মেশিন দিয়ে কাভার্ড ভ্যানের নাট-বল্টু কাটত। অপর আসামি ড্রাইভার আকাশ ও হেলপার সুমন মূলহোতা রিপনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার কথামত নির্ধারিত গোডাউনে গাড়ি পার্ক করাতো। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।

যেভাবে চুরি করার হয় গার্মেন্টস পণ্য

র‌্যাব জানায়, ইতোপূর্বে সাতটি অভিযান পরিচালনা করেছে তারা। ওই অভিযানের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গার্মেন্টস পণ্য চুরি প্রক্রিয়ার একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া তারা। এক্ষেত্রে প্রথমে এক বা একাধিক মাস্টারমাইন্ড থাকে যারা গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ডভ্যানের চালক ও তার সহকারীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে। অল্প সময়ে অধিক অর্থ প্রাপ্তির আশায় চালক ও সহকারীরা চোরচক্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে এই কাজে সহায়তা করে। কাভার্ডভ্যানে পণ্য লোড করার সময় বন্দরে প্রদর্শনের জন্য গার্মেন্টসের পক্ষ থেকে পণ্যের নমুনা চালকের কাছে দেওয়া হয়। সেই নমুনা পাওয়ার পর চালক সুযোগ বুঝে ছবি তুলে মূলহোতার কাছে পাঠায়। পণ্যের বাজার মূল্যের বিবেচনায় অধিক লাভজনক হলে মূলহোতা চালক ও সহকারীর সঙ্গে পরবর্তী চুক্তিতে যায়।

র‌্যাব জানায়, মূলহোতা আগে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী নির্জন জায়গায় অসাধু গোডাউন মালিকের সঙ্গে আঁতাত করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গোডাউন ব্যবহার করে, যেখানে চালক ও তার সহকারী গাইডের মাধ্যমে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানটি নিয়ে যায়। গোডাউনে পণ্য চুরির জন্য কাভার্ডভ্যান প্রবেশের পূর্বেই কার্টুন প্যাকেজিং ও লোড-আনলোড কাজে সিদ্ধহস্ত কয়েকজন সহযোগী সেখানে অবস্থান করে এবং দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে মালামালের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রেখে প্রত্যেক কার্টুনে সমপরিমাণ ঝুট কাপড় রেখে আবার আগের মতো কার্টুন সঠিকভাবে বাঁধাই করে কাভার্ডভ্যানে লোড করে দেয়। এরপর কাভার্ডভ্যানটি বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করে গেলে চোর চক্রের নিজস্ব মিনি কাভার্ড ভ্যানে করে তাদের সুবিধামত যায়গায় নিয়ে যায়।

কেআর/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর