শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘দুর্নীতিমুক্ত থাকবেন, অন্যরাও যেন সুযোগ না পায় খেয়াল রাখবেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

‘দুর্নীতিমুক্ত থাকবেন, অন্যরাও যেন সুযোগ না পায় খেয়াল রাখবেন’

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সরকারের বহুমুখী কার্যক্রম সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করাসহ জেলা প্রশাসকদেরকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩’ এর তৃতীয় দিনে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে এ নির্দেশনা দেন।


বিজ্ঞাপন


রাষ্ট্রপতি বলেন, নিজে দুর্নীতিমুক্ত থাকবেন এবং অন্যরাও যাতে দুর্নীতির সুযোগ না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার প্রমুখ।

দুর্নীতিকে দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায় উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আশা করি আপনারা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন।


বিজ্ঞাপন


জনকল্যাণে ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে ডিসিদেরকে তাদের মেধা ও দক্ষতা ব্যবহার করার ও নির্দেশনা দেন আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, জেলা প্রশাসকরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশাত্মবোধ ও একাগ্রতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাবেন।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি প্রত্যাশা করেন, ২০৩০-এর মধ্যেই বাংলাদেশ এসডিজির সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে “আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশে” পরিণত হবে।

জেলা প্রশাসনের কর্ণধার ও সেবক হিসেবে জনগণের দোরগোঁড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার অর্পিত এ গুরুদায়িত্ব আরও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সম্মানিত সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মূল্যবান পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে ডিসিদেরকে আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি।

হামিদ বলেন, জনগণের সেবা দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটাকে দয়া বা অনুগ্রহ মনে করার কিছু নেই। করোনাকালে ও পরবর্তীতে করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন আর্থিক ও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্য তেল ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ জাতীয় জীবনে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদেরকে সব সময়ই জনগণের পাশে থাকার নির্দেশনা দেন।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সরকারি সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, ব্যয় সংকোচন এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে আপনাদের আরও যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ করছি।

পরিবেশবান্ধব গ্রামোন্নয়নে আবাসন, শিক্ষা, কৃষি নির্ভর শিল্পের প্রসার, চিকিৎসা সেবা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানীয় জল ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থার মাধ্যমে উপজেলা সদরে ও বর্ধিষ্ণু শিল্পকেন্দ্রগুলোকে আধুনিক শহর-উপশহর হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগের সাথে বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় ঘটাতে জেলা প্রশাসকদেরকেও কার্যকরী ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি।

ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে তিনি দক্ষ, আধুনিক, জনকল্যাণমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব ডিজিটাইজ সেবা নিশ্চিতকরণে ডিসিদের আরো বেশি কৌশলী ও তৎপর হওয়ার তাগিদ দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, এসব ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদেরকে আরো কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, এসি ল্যান্ডসহ তৃণমূল পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে।

জেলা ই-সার্ভিস সেন্টার, পৌর ডিজিটাল সেন্টার ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে ডিসিদের কার্যকরী ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি।

দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সামাজিক বনায়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন, জলাভূমির উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের চলমান কর্মসূচির বাস্তবায়নে ডিসিদেরকে আরও সক্রিয় হওয়ার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। তিনি আরও বলেন, অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষা করতে হবে।

যুব সমাজের মেধা, সৃজনশীলতা ও প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে সরকার যুব সমাজকে সুসংগঠিত ও উৎপাদনমুখী করতে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’সহ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকর অবদান রাখার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। তিনি মাদকদ্রব্য যাতে যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে না দেয় সে দিকেও জেলা প্রশাসকদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেন।

পরে রাষ্ট্রপতি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ফটো সেশন ও চা-পানে অংশ নেন।

ডব্লিউএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর