মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘লাল’ সড়কও হকারদের দখলে!

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

‘লাল’ সড়কও হকারদের দখলে!

ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ যানবাহন ও নাগরিকদের চলাচলের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সড়কগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে চিহ্নিত করার কাজ করছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি সড়ককে লাল, হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে চিহ্নিত করাও হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক লাল রং দ্বারা চিহ্নিত করা হচ্ছে। ‘লাল’ চিহ্নিত সড়কে কোনো ধরনের হকার বসতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে ‘লাল’ চিহ্নিত কয়েকটি সড়কে কয়েক দফা অভিযানও চালিয়েছে ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু ফলাফল শূন্য। উচ্ছেদের পর এক ঘণ্টা পার না হতেই ‘লাল’ চিহ্নিত সড়ক আবার হকারদের দখলে চলে যায়। সিটি করপোরেশনের এমন ব্যর্থ উদ্যোগের পেছনে পদ্ধতিগত ভুলই দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সিটির সড়কগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যারা রাস্তা ও পায়ে হাঁটার পথকে লাল, হলুদ ও সবুজ- এই শ্রেণিতে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ ‘লাল’ সড়কের ফুটপাত ও রাস্তায় কোনোভাবেই হকার বসতে দেওয়া হবে না। হকার বসলেও উচ্ছেদ করা হবে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘লাল’ চিহ্নিত সড়কে আর হকার বসতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।


বিজ্ঞাপন


জিরো পয়েন্ট (নুর হোসেন চত্বর) থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে আহাদ পুলিশ বক্স পর্যন্ত সড়ককে অতিগুরুত্বপূর্ণ ‘লাল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ডিএসসিসি। ক্রমান্বয়ে এর বিস্তৃতি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এরপর এই সড়ক থেকে দোকানপাট ও হকার উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদের পর এক ঘণ্টা পার না হতেই স্থানগুলো আবার হকারদের দখলে চলে যায়।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের ঢাকা মেইলকে বলেন, গুরুত্ব অনুযায়ী সড়কগুলোকে তিন রঙে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে লাল চিহ্নিত সড়কে কোনো হকার বসতে দেওয়া হবে না। লাল চিহ্নিত সড়ক ও হাঁটার পথ থেকে হকার সরানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আবু নাছের বলেন, আর কিছু সড়ক গুরুত্ব অনুযায়ী হলুদ ও সবুজ চিহ্নিত করা হবে। সবুজ চিহ্নিত সড়কে সবসময় হকার বসতে পারবে। হলুদ চিহ্নিত সড়কে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত স্থান ঠিক করে দেবে যেখানে হকাররা নির্ধারিত সময়ে বসবে।

এরই মধ্যে ‘লাল’ চিহ্নিত সড়কের ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে ডিএসসিসি। জিরো পয়েন্ট (নুর হোসেন চত্বর) থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে আহাদ পুলিশ বক্স পর্যন্ত সড়ককে অতিগুরুত্বপূর্ণ ‘লাল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ডিএসসিসি। ক্রমান্বয়ে এর বিস্তৃতি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এরপর এই সড়ক থেকে দোকানপাট ও হকার উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদের পর এক ঘণ্টা পার না হতেই স্থানগুলো আবার হকারদের দখলে চলে যায়।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে ‘লাল’ চিহ্নিত গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (নূর হোসেন চত্বর) ও বায়তুল মোকারম এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এলাকাটি যেন হকার পাড়ায় রূপ নিয়েছে। শীতের সময় স্থানটি পরিণত হয়েছে গরম কাপড়ের পট্টি (গলি) হিসেবে।

অভিযান প্রসঙ্গে দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, আমরা অভিযান চালাচ্ছি। অভিযান শুরুর আগে মাইকিং করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে লাল সড়কে কোনো হকার বসতে এবং কাউকে অবৈধভাবে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করতে দেব না। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন: উচ্ছেদের জায়গায় সুসজ্জিত বাস কাউন্টার!

মুনিরুজ্জামান আরও বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর পর থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দিয়ে যান চলাচল বেড়েছে। তাই এই ফ্লাইওভার ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে মেয়রের নির্দেশনার আলোকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স এবং বঙ্গভবন ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারগামী ও ফ্লাইওভার হতে গুলিস্তান চত্বর এলাকাকে 'রেড জোন' ঘোষণা করা হয়েছে।

যে ভুলে ব্যর্থ ডিএসসিসির উদ্যোগ

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এ ধরনের হকার ম্যানেজমেন্ট করতে গেলে আরও অনেক বিষয়ের ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন যদি মনে করে, কোনো রাস্তা নাগরিকদের নিরবিচ্ছিন্ন হাঁটার পথ করে দেব, যে রাস্তা হকার ধারণ করার মতো অবস্থানে নেই তা রেড জোন করে দিলাম, তা হবে না। এর আগে পরিকল্পনা নিতে হবে।

তিনি বলেন, যারা বর্তমানে স্থানগুলোতে (রেড জোন) বসছেন, তারা কোথায় যাবেন। উচ্ছেদ করা হলে হকাররা অন্য স্থানে গিয়ে বসবে। যেখানে সবুজ জোন সেখানে গিয়ে বসবে। যে কারণে সবুজ জোনও চলাচলের উপযোগিতা হারাবে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, হকার ব্যবস্থাপনা হতে হবে ওয়ার্ডভিত্তিক। সিটি করপোরেশন এলাকার নেটওয়ার্ক হকার ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। সামগ্রিকভাবে হকার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। যার জন্য একটা স্টাডি প্রয়োজন। যার উপর ভিত্তি করে রেড জোন, গ্রিন জোন হতে পারে।

অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রেড জোনে যারা পড়বে তাদের জন্য কি সমাধান- এমন প্রশ্ন সামনে আসবে। তার আগে কাদের হকার হিসেবে চিহ্নিত করা হবে বা হকারের সংখ্যা কত- তা জানা প্রয়োজন। যারা নিয়মিত হকারি করছেন তাদের আইডি কার্ড দিতে হবে। হকারি করে কাদের জীবন-জীবিকা চলে সেই সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। তাদের বায়োমেট্রিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। সিটি করপোরেশন তখন বুঝতে পারবে কত সংখ্যক হকার নিয়ে তারা কাজ করছে। তারপর পরিকল্পনা হতে পারে তাদের কোথায় বসানো হবে। সিটি করপোরেশন এমন কোনো পরিসংখ্যন করেনি। তখন দেখা যাবে সবুজ জোনে হকারদের উপস্থিতি ক্রমাগত বাড়ছে। কারণ, সবুজ জোন মানেই লিগালিটি।

তিনি বলেন, হকার সংখ্যা নির্ধারণের পর দেখা যাবে সিটি করপোরেশনের পক্ষে এত সংখ্যক হকার বসানোর সক্ষমতা নেই। তখন সিডিউল করে হকার বসানো যেতে পারে। কেউ শনিবার বসবে, কেউ রোববার বসবে। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য হকাররা কার কাছে দায়বদ্ধ থাকবে তাও জানাতে হবে। এলাকাভিত্তিক হকার ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে।

ঢাকায় হকারদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিটি করপোরেশন একটা সংখ্যা নির্ধারণ করার পর দেখা যায় সাতক্ষীরা থেকে আরও কিছু মানুষ এসে হকারি শুরু করল। হকার বাড়তে থাকে। সংখ্যা নির্ধারণ করার পর নতুন করে আর কাউকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। কারণ নগরীর আর হকার ধারণ করার সক্ষমতা নেই। মোট কথা হলো, ঢাকা তো সব মানুষকে ধারণ করতে পারবে না। তাদের যদি সমস্যা থাকে (নতুন আগতদের), সরকার তা অন্যদিক দিয়ে সমাধান করবে। সংখ্যা নির্ধারণের কাজ সিটি করপোরেশনকেই করতে হবে। তারা যদি না পারে অন্য কাউকে নিয়োগ দিতে হবে। আউটসোর্সিং করতে পারে। হলিডে মার্কেটও এটা সমাধান হতে পারে। তবে এটা পূর্ণাঙ্গ সমাধানের পথ নয়।

ডিএইচডি/জেএম/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর