শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ডাকাত থেকে যেভাবে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়ান মাসুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ডাকাত থেকে যেভাবে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়ান মাসুদ

মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ। চাকরি করতেন পোস্ট অফিসে। তবে এই পেশার আড়ালেও ছিল তার আরেক পরিচয়। রাত হলেই নেমে পড়তেন ডাকাতিতে। পরে অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতারও করে। তবে কারাগারে গিয়ে মাসুদের সঙ্গে পরিচয় হয় কয়েকজন জঙ্গি সদস্যদের। এরপর আবারও নতুন করে অপরাধের জগতে পা বাড়ায় সে।

কারাগারে থাকা ওই জঙ্গি সদস্যদের অনুপ্রেরণায় মাসুদ একপর্যায়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। কারাগার থেকে বের হয়ে নাম লেখান ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের নতুন জঙ্গি সংগঠনে। সবশেষ সেই সংগঠনের অন্যতম শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন মাসুদ।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

RABএর আগে গতকাল সোমবার (২৩ জানুয়ারি) মাসুদকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, গ্রেফতার মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ ২০০৭ সালের আগে পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে ডাকাতি মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। ওই সময় কারাগারে থাকাকালীন জঙ্গিদের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয় এবং একপর্যায়ে সে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। পরবর্তীকালে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে।

>> আরও পড়ুন: ডাকাতি মামলায় কারাগারে গিয়ে বের হয় জঙ্গি হয়ে: র‌্যাব


বিজ্ঞাপন


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে জামাতুল আনসার এর শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সঙ্গে মাসুদের পরিচয় হয়। ওই সময় সে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করে। এছাড়াও সে সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সে সংগঠনের সামরিক শাখার বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও সংগঠনের আমীরের নির্দেশনায় কুমিল্লার পদুয়ার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি শূরা কমিটির মিটিংয়ের আয়োজন করে মাসুদ। এসব সভায় সংগঠনের সামরিক শাখার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

Arrestখন্দকার আল মঈন জানান, ২০২১ সালে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ সেন্টারের সঙ্গে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চুক্তিপত্র স্বাক্ষরকালীন বৈঠকে মাসুদসহ অন্যান্য শূরা সদস্যরাও উপস্থিত ছিল। ওই বৈঠকে গ্রেফতার মাসুদ পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের রূপরেখা নির্ধারণ করে। এছাড়াও ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সিলেট থেকে চার তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় সে জড়িত ছিল। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে নিখোঁজ ওই চার তরুণকে মাসুদ সামরিক শাখায় নিযুক্ত করে।

প্রায় এক বছর আগে মাসুদ ওই জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, মাসুদের সামরিক কার্যক্রমের দুটি শাখা ছিল। যার একটি পাহাড়ে এবং অপরটি সমতলে। সমতলে সামরিক শাখার কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। সে দেশব্যাপী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের সামরিক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত। তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে পাহাড়ে সামরিক শাখার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপর একজন সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এছাড়া তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র-গোলাবারুদ ক্রয় করা হতো।

>> আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলির পর দুই জঙ্গি গ্রেফতার

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, মাসুদ বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও তদারকির জন্য পার্বত্য অঞ্চলে গমন করত। পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে সে সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করে। কিছুদিন আগে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে সে।

কেআর/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর