শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সংরক্ষিত আসন বাড়িয়ে সরাসরি ভোট চান নারীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

সংরক্ষিত আসন বাড়িয়ে সরাসরি ভোট চান নারীরা

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৫০ এর পরিবর্তে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে জেলাওয়ারি ৬৪ করারও দাবি উঠেছে।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে নারীদের সংরক্ষিত আসনে সরকারি ভোটের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হয় অনুষ্ঠান থেকে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন দাবি তুলছে। দেশের মানুষ যেন তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পায় এবং একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এসব দাবির সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই জাতীয় সংসদের ৩৫০টি আসনের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে কথা বলছেন না। এটি হতাশার কথা।

বক্তারা বলেন, জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে, এবং আসনগুলোতে সংসদে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো আনুপাতিক হারে সাধারণ আসনের নির্বাচিত সদস্যদ্বারা মনোনীত হয়ে আসছেন। সংবিধানের ৬৫। (৩) ধারা অনুযায়ী এই আসনগুলো সংরক্ষিত হয়ে আসছে এবং এর নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। আসন সংখ্যা এবং মেয়াদ কয়েক ধাপে বেড়ে ৫০ হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি বদলায়নি।
 
দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের দাবিতে আন্দোলনের কথা তুলে ধরে এতে বলা হয়, ১৯৯১ সাল থেকে যতোগুলো সংসদ নির্বাচন হয়েছে ততবারই নারী আন্দোলন সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখনো এই আসনগুলো ৩০০ আসনের নির্বাচিত সদস্য দ্বারাই দলের নারীদের মনোনীত করা হচ্ছে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতে হচ্ছে না এবং দেশে নারী ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বক্তারা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ পর্যন্ত এসে দেখা যাচ্ছে আসন সংখ্যা ১৫ থেকে ৫০ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু সংরক্ষিত আসন এখনো সরাসরি নির্বাচনের মুখ দেখেনি। এর প্রধান কারণ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বড় দুটি রাজনৈতিক দলের স্বার্থের সঙ্গে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি সাংঘর্ষিক। ফলে বড় দলগুলোর এই ক্ষেত্রে ইচ্ছার তীব্র অভাব রয়েছে। অন্যান্য দলের রয়েছে রহস্যজনক নীরবতা। এখন সময় এসেছে এই বিষয়ে সবার মুখ খোলার।


বিজ্ঞাপন


বক্তারা অভিযোগ করেন, পরোক্ষ নির্বাচনের বিধান নারীদের পঙ্গু করে দিয়েছে। তাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। তারা সংসদে সেকেন্ড ক্লাস সদস্য হয়ে থাকছেন। জাতীয় সংসদেই নারীদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।

তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো, আরপিও’র ৯০ (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) এর খ(২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সকল স্তরে অন্তত ৩০ শতাংশ সদস্যপদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের যে বিধান তা মানা হচ্ছে না। ফলে নারীর রাজনৈতিক সক্রিয়তা নেতৃত্ব পর্যায়ে গিয়ে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

আয়োজকদের দাবি, নারীদের সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের উচিত আসন সংখ্যা অনুযায়ি নির্বাচনী এলাকা কি হবে তা ঠিক করা।

এসময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবিও পেশ করা হয়।
তা হলো- ১. জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন দিতে হবে। এর জন্যে সংবিধানে ৬৫ (৩) ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। বর্তমান একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই সহজেই এই সংশোধনী আনতে পারেন। অন্যান্য দল যারা সংসদের বাইরে আছে তারাও এই বিষয়ে একমত হয়ে এই উদ্যোগে সহায়তা করবে।

২. সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে জেলাওয়ারি ৬৪ করতে হবে। তবে অন্যান্য নারী সংগঠন মোট ৩০০ আসনের এক-তৃতীয়াংশ (বা ১০০ আসন) করার যে দাবি তুলেছেন তার সঙ্গে দ্বিমত নেই।

৩. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নারী আজীবন সংরক্ষিত আসনে থাকবেন এটা মোটেও কাম্য নয়। নারীরা পুরুষের সাধারণ আসনে নির্বাচন করবেন এটাই হচ্ছে লক্ষ্য। কিন্তু সাধারণ আসনে রাজনৈতিক দলগুলে নারীদের মনোনয়ন কম দেয় বলে তারা সংরক্ষিত আসনে যেতে হয় বাধ্য হয়। নারী আন্দোলনের দাবি হচ্ছে সাধারণ আসনের কমপক্ষে ১০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দিতে হবে।

এই বিষয়গুলো রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করবে এমন প্রত্যাশাও করেন বক্তারা।

এতে বক্তব্য রাখেন— ড. দিলারা চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নারী নেত্রী ফরিদা আখতার, সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা প্রমুখ।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর