মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

লু’র মুখে র‌্যাবের প্রশংসা, নিষেধাজ্ঞা কি উঠছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

লু’র মুখে র‌্যাবের প্রশংসা, নিষেধাজ্ঞা কি উঠছে?

ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তার এই বক্তব্যে গুঞ্জন উঠেছে, তাহলে কি এক বছরের বেশি সময় ধরে র‌্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে তা উঠতে যাচ্ছে? তবে এ ব্যাপারে আলোচনা হলেও র‌্যাবের ওপর থেকে ঠিক কবে নিষেধাজ্ঞা উঠবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি মার্কিন এই কূটনীতিক।  

ডোনাল্ড লু গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকায় আসেন। রোববার (১৫ জানুয়ারি) তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে র‌্যাব প্রসঙ্গও আলোচনায় আসে।


বিজ্ঞাপন


মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের যৌথ ব্রিফিংকালে ডোনাল্ড লু বলেন, র‌্যাব মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের দায়িত্ব পালনে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন, এটি একটি চমৎকার কাজ। এটি প্রমাণ করে যে, র‌্যাব মানবাধিকারকে শ্রদ্ধাবোধ রেখেই সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং আইন প্রয়োগকারী গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে সক্ষম।

আরও পড়ুন: র‌্যাব নিয়ে আমাদের ভালো আলোচনা হয়েছে: ডোনাল্ড লু

 হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতির উল্লেখ করে লু বলেন, চলতি সপ্তাহের ওই বিবৃতি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমাতে র‌্যাবের বিস্ময়কর সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

RR2


বিজ্ঞাপন


মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব এবং এর কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সেই দিকে ইঙ্গিত করে লু বলেন, ‘র‌্যাব সম্পর্কে আমাদের বেশ ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা এ ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতির কথা স্বীকার করেছি।’

এর আগে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে পৃথক বৈঠক করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আমরা অত্যন্ত আন্তরিক ও খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার প্রকাশ করেছি।

আরও পড়ুন: কী বার্তা নিয়ে আসছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী?

শীর্ষ এই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন সমস্যা দেখবে, তখন তারা কথা বলবে এবং পরামর্শ দেবে। আমরা বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াব।

ডোনাল্ড লু বলেন, মার্কিন কংগ্রেস ট্রেডিং স্কিমের অনুমোদন দিলে বাংলাদেশই হবে প্রথম দেশ, যারা জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) এর জন্য যোগ্য হবে।

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনও আমাদের কংগ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছি যে, তারা কখন কোনো দেশকে জিএসপি অনুমোদন দেয়। আমরা সরকারের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। তাই, যখন এটি অনুমোদিত হবে, তালিকায় প্রথম দেশটি হবে বাংলাদেশ।

RR3

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে ডোনাল্ড লু’র এই সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা রাশিয়ার

সূত্র বলছে, ডোনাল্ড লু মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। গত ৩০ বছর যাবৎ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে পররাষ্ট্র কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ডোনাল্ড লু। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর (অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি) দায়িত্ব পান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রভাবশালী এ কর্মকর্তার নাম বিশেষ আলোচনায় আসে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্য থেকে। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পেছনে লু’কে দায়ী করেছিলেন।

ডোনাল্ড লু’র সফরকে সরকার বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। চলতি মাসের শুরুতে সরকারের তিন মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংস্থার মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন।

LU3

ওই বৈঠকে ডোনাল্ড লুর সফরের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে আইনের শাসন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মোকাবিলায় একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।

এলিট ফোর্স র‌্যাবের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনেকটা অস্বস্তিতে আছে সরকার। গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে নতুন করে আবার নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে বিরোধী শিবির থেকে প্রচার চালানো হচ্ছিল। এটা নিয়ে সরকারের ভেতরেও এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করে। তবে শেষ পর্যন্ত নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সরকার র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক দফা অনুরোধ জানিয়ে আসছে। এছাড়া এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকার প্রত্যাশা করছে, ডোনাল্ড লু’য়ের ঢাকা সফরের পর এলিট ফোর্সের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর