রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শীতের কাপড় কিনতে নিউমার্কেটে উপচে পড়া ভিড়, দাম একটু বেশি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

শীতের কাপড় কিনতে নিউমার্কেটে উপচে পড়া ভিড়, দাম একটু বেশি

গত কয়েকদিনের হিমেল ঠাণ্ডা হাওয়ায় সারাদেশের মতো নগরবাসীও জবুথবু হয়ে পড়েছে। ফলে শীতের কাপড় কিনতে মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে নিউমার্কেট এলাকায় গড়ে ওঠা মার্কেটগুলোতে শুক্রবার দিনভর ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে শীতের কাপড়ের চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে ঢের। 

আলিসা রহমান তার ১২ বছরের মেয়েকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে নিউমার্কেটে এসেছেন শীতের কাপড় কিনতে। স্বামী থাকেন ইটালিতে। তাই নিজেই মার্কেট করতে এসেছেন। তিনি বলছিলেন, এবারের শীত কাবু করে দিয়েছে। গতবছর যেসব শীতের কাপড় ছিল তা দিয়ে কোনোভাবে এবার শীত নিবারণ করা যাচ্ছে না। ফলে নতুন কাপড় কিনতে এসেছেন তিনি। তার ভাষ্য, গত বছরের চেয়ে শীতের কাপড়ের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে টুপি, উলের তৈরি সোয়েটার এবং ট্রাউজারের। 


বিজ্ঞাপন


আলিসা রহমানের মতোই মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকা থেকে স্বামীর সাথে ছোট বাচ্চাকে নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন মনিকা। তিনি বলছিলেন, এবার ছোটদের কাপড় বেশ দাম হাঁকাচ্ছেন দোকানিরা। ফলে লোকাল মার্কেটগুলোতে থেকে কেনা না সম্ভব হচ্ছে না। নিউমার্কেট এলাকায় তুনামূলক কাপড়ের দাম কম এ কারণে তিনিও এসেছেন অন্যদের মতো।

new-market

শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সাইন্সল্যাব মোড় থেকে নিউমার্কেট মোট পর্যন্ত রাস্তার দুই ফুটপাতে এবং ওভারব্রিজে ছাড়াও মার্কেটগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না এই এলাকায়। বিশেষ করে নিউমার্কেট ও চাঁদনী চককে বিভক্ত করে দেওয়া ওভারব্রিজ অতিক্রম করতে ঘাম ছুটেছে আগত মানুষদের। পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ছিল বেশি। এত মানুষের ভিড় যে, রাস্তার এপাশ থেকে ওভারব্রিজে উঠে অন্য পাশে নামতে ১৫ থেকে ২০মিনিট লেগেছে। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

বিশেষ করে ঢাকা কলেজের উল্টো পাশে ফুটপাতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এই ফুটপাতকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শীতের কাপড় দোকানিদের সারাদিন ব্যস্ততায় কেটেছে। দূর দুরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন হাজারো ক্রেতা। গতকালের দৃশ্য ছিল অন্য দিনের চেয়ে ভিন্ন। আগতরাদের অধিকাংশই বলেছেন, এবার এই এলাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিড় বেশি। ছুটির দিন হওয়ায় নগরবাসী একযোগে স্বল্পমূল্যের পণ্য হয়ে কিনতে ছুটে এসেছিলেন এই এলাকায়।


বিজ্ঞাপন


নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার বেশি বিক্রি হয়েছে শীতের টুপি, হাতমোজা, শিশুদের কাপড়, বড়দের সোয়েটার, এছাড়াও কানটুপি। এসবের বাইরে বিক্রি হয়েছে জ্যাকেট এবং ট্রাউজার।

নিউমার্কেট এলাকার পশ্চিম পাশে রাস্তা ফুটপাতে ভ্যানে হুডিযুক্ত জ্যাকেট বিক্রি করছিলেন সুমন নামে এক যুবক। প্রতি পিস দাম হচ্ছেন আড়াইশত টাকা। ক্রেতারাও দেখছেন এবং কিনছেন।

new-market

কথা হয় ঢাকা কলেজের ছাত্র আব্দুল আজিজ এর সাথে। তিনি বলেন, একটা জ্যাকেট কিনতে গেলে হাজার বারোশো টাকা দরকার কিন্তু এত টাকা পাবো কই। তাই অল্প দামে নিউমার্কেট এলাকায় ব্লেজার সোয়েটার কেনার জন্য এসেছি। কিন্তু এবার একটু দাম বেশি নিচ্ছেন দোকানিরা।

আজিজের মতোই, মহাখালী থেকে ট্রাউজার ও সোয়েটার কিনতে এসেছেন আক্তার হোসেন। তিনি ঢাকা মেইলকে জানান, তিনি সহ তার পাঁচ বন্ধু তিতুমীর কলেজে পড়েন। তারা শুক্রবার বিকেলে নিউমার্কেট এলাকার ঢাকা কলেজের সামনে বাস থেকে নামেন। কিন্তু রাস্তার পূর্বপাশ থেকে নিউমার্কেট ওভারব্রিজ পার হয়ে মূল মার্কেটে আসতে তাদের ঘাম ছুটেছে।

নিউ মার্কেট এলাকার একটি চায়ের দোকানে তাদের সাথে কথা হচ্ছিল। আক্তার বলেন, বন্ধুরা মিলে একসাথে এসেছি যাতে কম দামে বেশি কাপড় নিয়ে লাভবান হতে পারি। কিন্তু এবার শীতের কাপড়ের দাম বেশি মনে হচ্ছে। বিশেষ করে জ্যাকেট ও সোয়েটারের দাম।

যখন তাদের সাথে কথা হচ্ছিল সে সময়ে পাশে থাকার মসজিদের মাইক থেকে আযানের ধ্বনি আসছিল। তখন পর্যন্ত তারা কোনো কাপড় কিনতে পারেননি। শুধু দরদাম করে চলেছেন। তার ফাঁকে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে এই ঠাণ্ডা থেকে কিছুটা রেহাই পেতে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন।

আক্তারের বন্ধু সুজন হাওলাদার বলেন, গ্রামের বাড়ি বরিশালে যাব এ কারণে এখানে এসেছি কিছু শীতের কাপড় কিনতে। প্রতিবছর এখান থেকে শীতের কাপড় কিনে নিয়ে যাই। 

গতকাল নিউমার্কেট এলাকায় শীতের কাপড় কিনতে আসা ক্রেতাদের অধিকাংশ অভিযোগ করেছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এই এলাকায় শীতের কাপড়ের দাম বেশি। তারা যা বাজেট নিয়ে এসেছিলেন তা দিয়ে কুলানো যাচ্ছে না।

অন্যদিকে বিক্রয়কারীদের ভাষ্য, এবার আসলে কাপড়ের দাম বেশি। বিশেষ করে যে সকল কাপড় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় সেই সকল শীতের কাপড়ের দাম তারা পাইকারি দামে বেশি কিনেছেন। এ কারণে খুচরা বাজারে তাদেরকে কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করতে হচ্ছে। একদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের ফলাফল অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারে শীতের মার্কেটের এই অবস্থা বলে তারা মনে করছেন।

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর