রাজধানীর মিন্টু রোড এলাকায় চার বছর ধরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন শফিকুজ্জান। তিন রুমের ফ্লাটের জন্য তাকে প্রতি মাসে দিতে হয় ২১ হাজার টাকা। এর বাইরে আছে সার্ভিসচার্জ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল। করোনাকালে ভাড়া বৃদ্ধি না করলেও নতুন বছরের শুরুতেই (জানুয়ারি ২০২৩) ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তিন হাজার টাকা। ফলে বাধ্য হয়ে কম ভাড়ার বাসা খুঁজছেন শফিকুজ্জামান।
ঢাকা মেইলের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, যে হারে সবকিছুর দাম বেড়েছে, এত টাকা ভাড়া দিয়ে থাকা কঠিন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে প্রতি মাসে বাড়তি ৩ হাজার টাকা খরচ করা সম্ভব না।
বিজ্ঞাপন
নিজের অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাসা ভাড়া, সংসার খরচ, বাচ্চাদের স্কুলখরচ দিয়ে মাসের বিশ তারিখে হাতে কিছুই থাকে না। বাকি দশ দিন চলতে হয় টানাটানিতে। অনেক খুঁজে ২০ হাজার টাকার মধ্যে একটি বাসা পেয়েছি। ৩ রুমের বাসা, রুমগুলোও ছোট, ছয় তলায়। কিন্তু এছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কারণ সংসারের অন্য খরচও তো চালাতে হবে।
এমন অবস্থা শুধু শফিকুজ্জামানেরই নয়। বছর শেষে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোসহ নানা কারণে বাসা ছাড়ছেন ভাড়াটিয়ারা। এতে একদিকে যেমন ভাড়াটিয়ার অভাবে কোথাও কোথাও ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে আছে, অন্যদিকে ঢাকার অলি-গলি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকায় বেড়েছে ‘টু-লেট’ লেখা সাইনবোর্ড।
গত দুই দিনে রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকা ছাড়াও মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মগবাজার, আজিমপুর ও মিরপুর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ধানমন্ডি, শান্তিনগর, বনানী, নিকেতন, লালমাটিয়া থেকেও অনেকে বাসা পরিবর্তন করে কম ভাড়ার বাসায় চলে যাচ্ছেন। ফলে ওই সব এলাকায় এখন বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি।
ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অর্থনৈতিক নানা চাপের মধ্যে বছর ঘুরতেই বেড়েছে বাড়ি ভাড়া। অন্যদিকে সবকিছুর ঊর্ধ্বমুখী দামে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় বাসা ছাড়ছেন কেউ কেউ। অর্থনৈতিক চাপসহ টানাপড়েনে কারও কারও উপার্জনও কমেছে। অনেকেই নানা কারণে হারিয়েছেন চাকরি। সবমিলিয়ে নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত সবার জীবনেই পড়েছে চাপ।
বিজ্ঞাপন
কল্যাণপুরে বাসা পরিবর্তন করতে দেখা যায় আব্দুল বাতেন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবীকে। কথা হলে জানান, থাকতেন ধানমন্ডি এলাকায়। নিয়মিত ২২ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আসলেও নতুন বছর থেকে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে বাড়িওয়ালা। তাই বাসা ছেড়ে দেওয়া।
আব্দুল বাতেন বলেন, যে হারে সবকিছুর দাম বেড়েছে, এত টাকা ভাড়া দিয়ে থাকা কঠিন। ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের কারণে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি। এরমধ্যে প্রতি মাসে বাড়তি টাকা খরচ করা সম্ভব না। অনেক খুঁজে ১৭ হাজার টাকার মধ্যে এই বাসা পেয়েছি।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেড়েছে টু-লেট। অভিজাত এলাকাতেও খালি পড়ে আছে বাসা। গুলশান নিকেতন এলাকার ৬ তলা বাড়ির মালিক শেখ মোজাম্মের হাওলাদার। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কয়েকটি পরিবার ফ্ল্যাট ছেড়েছে। আমাদের যেহেতু বাড়ি ভাড়া দিতে হয়, বছর শেষে ভাড়া কিছুটা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। গত দুই বছরে এক হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়েছেন বলে জানান তিনি।
তবে হঠাৎ কয়েকটি পরিবারের একসঙ্গে বাসা ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকের চাকরির স্থান পরিবর্তন হয়েছে। কেউ কেউ আবার সন্তানদের নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। তাই বাসা ছেড়েছেন। যদিও তার দাবি ভাড়া বাড়ানোয় কেউ বাসা ছাড়েননি।
এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত ৩ বছরে (২০১৯-২০২১) ঢাকায় বাড়ি ভাড়া ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর একটি ১ হাজার ২০০ বর্গফুট আকারের বাড়ির ভাড়া ২০১৯ সালে ছিল গড়ে ২৪ হাজার ৫৯০ টাকা, যা ২০২০ সালে ২৬ হাজার ৫২০ টাকায় এবং ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে গত ১ বছরে কত মানুষ আগের চেয়ে কম ভাড়ার বাসায় উঠেছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য এই সংস্থার কাছে নেই।
এসব বিষয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ঢাকাবাসীদের অনেকেই কম ভাড়ার বাসায় উঠতে বাধ্য হচ্ছেন এবং এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সরকার অনেক আগেই বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
ডিএইচডি/জেএম/আইএইচ

