‘খাওয়াও এক্কান পান, হুনাইমু বাউলা গান/পানের সাথে দিও জর্দা, থাকলে দিও একটু আদা/লাগব নে ঘেরান।’ পান নিয়ে প্রচলিত আছে এমন বহু গান। পানপ্রেমী বা পানখোরদের মতে, জর্দা আর মশলায় পানে আনে বাড়তি স্বাদ। খাবারের পর পান খাওয়া বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের অংশ। অতিথি আপ্যায়নেও যার জুড়ি নেই। গ্রামীণ মানুষ কিংবা বয়ষ্কদের কাছে খাবারের পর পান অনন্য।
তাই বলে পানের সাথে আগুন! হ্যাঁ, ‘আগুন পান’ নামে খ্যাত নানা উপকরণের মিশ্রণে তৈরি বিশেষ এ পান অনেকের কাছেই দারুণ সমাদৃত।
বিজ্ঞাপন
একটু পেছনে ফেরা যাক। সময়ের সাথে পানে এসেছে বৈচিত্র্য। প্রতিটি পানের স্বাদ আর ঘ্রাণেও রয়েছে ভিন্নতা। যেমন- বেনারসি পান, শাহি পান, কাশ্মীরি পান, জামাই-বউ পান, প্রেমিক-প্রেমিকা পান, ভালোবাসার পান, হানিমুন পানসহ আরও কত কী।
উপকরণে সামান্য পার্থক্য থাকলেও মূল উপকরণ প্রায় একই। পানে এখন আর কেবল চুন, সুপারি আর খয়েরই ব্যবহৃত হয় না। মসলা হিসেবে থাকে মোরব্বা, খেজুর, কিচমিচ, খোরমা, তানশিন, তেরেঙ্গা, এলাচ, চমন বাহার, তরক, ইমাম, নারকেল, সেমাই, ঝুরা ইত্যাদি।
রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে ‘আগুন পান’ পাওয়া গেলেও খ্যাতি রয়েছে নাজিরা বাজারের। এছাড়া পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের কাছে নাজিরা বাজারের কাজি আলাউদ্দিন রোড লোভনীয় এবং পরিচিত স্থান। যার অন্যতম কারণ বাহারি সব খাবার। পর্যটকদেরও প্রধান আকর্ষণ নামকরা সব বিরিয়ানি-কাবাব, লাচ্ছি। সবশেষ ভিড় জমান পানের দোকানে।
খাবারের গলি খ্যাত নাজিরা বাজারে বিকিকিনি শুরু হয় মূলত রাত বাড়লেই। বৈচিত্র্যময় খাবারের স্বাদ নিয়ে প্রায় সবাই মুখে পোরেন মিষ্টি পান। তাতে মসলা থাকে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ রকমের। তবে পুরান ঢাকার এই মিষ্টি পানে বৈচিত্র্য আনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্রিতে।
বিজ্ঞাপন
দোকানিরা বলছেন, আগুন পানের প্রচলন শুরু ভারতের দিল্লিতে। যা এক সময় আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বিশেষ মশলার মিশ্রণে তৈরি পানটি ক্রয়ে গুনতে হয় ৪০ টাকা, আর বিশেষ পানের দাম ৫০ টাকা। রয়েছে আরও দাবি পান।
নাজিরাবাজারে ‘আগুন পান’ বিক্রি হওয়া দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, স্বাদ ও উপকরণের পার্থক্য বিচারে পানের দাম ২০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। নানার ধরনের মধ্যে আছে- চুইংগাম ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি চুইংগাম পান, স্ট্রবেরির জেলি দিয়ে তৈরি স্ট্রবেরি পান, বিভিন্ন স্বাদের ভ্যানিলা ক্রিম দিয়ে তৈরি ভ্যানিলা পান, অরেঞ্জ জেলি দিয়ে তৈরি অরেঞ্জ পান, চকলেট ক্রিম দিয়ে তৈরি চকলেট পান। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয় স্পেশাল ঢাকার নওয়াবি পান। তবে সবচেয়ে দামি পান ‘লাভ ফর এভার’।
পানের উপাদান সম্পর্কে জানাতে গিয়ে নাজিরা বাজারের চৌরাস্তায় 'আল্লাহর দান জলিল ভাইয়ের মিষ্টি পান’ দোকানি জলিল ঢাকা মেইলকে বলেন, রয়েছে চকলেট, বাদাম, নারকেল, গুলতান চাটনি, চকলেট ক্রিম, ভ্যানিলা ক্রিম, স্ট্রবেরি ও অরেঞ্জ জেলি, পেঁপে ভাজি, টুটিফুটি মোরব্বা, কোরমা, সুইট বল দানা, কালিজিরা, তবক, সুপারি, লবঙ্গ, একাঙ্গী, চুনসহ অর্ধশতাধিক উপাদান। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫টি উপাদানের মিশ্রনে তৈরি হয় পান।
আগুন জ্বালানোর উপাদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, পানের সাথের উপাদানগুলোর ওপর এক ধরনের বিশেষ তরল পদার্থ দেওয়া হয়। যা থেকে আগুনের সৃষ্টি। আগুনে পানের স্বাদ বাড়ে বলেও দাবি তার।
পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আজিম উদ্দিন। সবশেষ এসেছেন পানের দোকানে। ঢাকা মেইলের সাথে আলাপকালে বলেন, বাহারি বেশ কিছু খাবার খাওয়া হয়েছে। পান না খেলে কেমন যেন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তাই আসা।
আগুন পান কতটা স্বাস্থ্যকর- এমন প্রশ্নের জবাবে আজিম বলেন, স্বাস্থ্যকর বলে মনে হয় না। ঐতিহ্য বলেই খাওয়া।
ডিএইচডি

