সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াতেই অভিযান: ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার

নয়াপল্টনে অভিযানের পরিকল্পনা না থাকলেও সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পরই সেখানে পুলিশি অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার বিশ্বাস।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযানে অসংখ্য বোমা জব্দ করা হয়েছে। যখন আমরা কার্যালয়টির সামনে অবস্থান নিয়েছি তখন আমাদের উদ্দেশ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। যখন অসংখ্য সাংবাদিক ও আমাদের পুলিশ সদস্যরা আহত হচ্ছে, যখন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, আমরা কিন্তু অভিযান চালানোর জন্য এখানে আসিনি কিন্তু যখন আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে তখন আমরা অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছি।
বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, এখানে ডিবি, পুলিশ, সোয়াত টিমের সদস্যরা ছাড়াও বোম ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা আসছেন। তারা তাদের কাজগুলো করবেন।
এ সময় বিএনপির কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অসংখ্য জনকে গ্রেফতার করেছি। তবে সংখ্যাটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।’
এর আগে বিকেলে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে না পেরে সামনের ফুটপাতে বসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সমাবেশ বানচাল করতে পুলিশ নিজেরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। টিয়ারশেল মেরেছে, নেতাকর্মীদের আহত করেছে। জোর করে কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। আমাদের শিমুল বিশ্বাসসহ অনেক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে।
এর কিছু আগেই শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলামসহ বেশকিছু নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। সব নেতাদের আটকের পর কাউকে প্রিজন ভ্যানে করে আবার কাউকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায় পুলিশ।
আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিভাগীয় সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দলটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে না বলে জানিয়েছে। তৃতীয় কোনো ভেন্যুর বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠের কথাও আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যেই বুধবার নয়াপল্টনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেখানে বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ওই সময় নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে রায়টকার দিয়ে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ আরও জোড়ালো হয়। এতে পুরো এলাকা যেন রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এ সময় স্লোগান দিয়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে নয়াপল্টন থেকে ফকিরাপুল মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে দলীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা। সেই সঙ্গে কার্যালয়ের মধ্যে আটকা পড়েন রুহুল কবির রিজভীসহ আরও অনেক নেতাকর্মী।
এদিকে, বুধবার বিকেলের ওই সংঘর্ষের পর নয়াপল্টন কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে একে একে অবরুদ্ধ নেতাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ বিএনপির।
অন্যদিকে, বুধবার রাত পৌনে ৮টা অবধি বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তাসহ পল্টন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এই এলাকায় মোতায়েন রয়েছে।
এমআইকে/এমই/আইএইচ