শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নৈতিক স্খলনের দায়ে বহিষ্কার হয়েছিলেন ঢাবির সেই শিক্ষক

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

নৈতিক স্খলনের দায়ে বহিষ্কার হয়েছিলেন ঢাবির সেই শিক্ষক

রাজধানীর শাহবাগে গাড়ির বাম্পারে আটকে যাওয়া নারীকে টেনে নেওয়া প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ। রুবিনা আক্তার নামের ওই নারীর আর্তচিৎকার আর আশপাশের মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচিতেও গাড়ি থামাননি নৈতিক স্খলনের দায়ে বহিষ্কার হওয়া ঢাবির সেই শিক্ষক। উল্টো গাড়ির গতি বাড়িয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার টেনে নিয়ে যান রুবিনাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধাওয়া করে নীলক্ষেত মোড়ের কাছে গাড়িটি থামায়। ততক্ষণে শিক্ষক নামের ‘কলঙ্ক’ আজহার জাফর শাহের নৃশংসতায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রুবিনা আক্তার।

শুক্রবার বিকেলের এই ঘটনা মানুষের মনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে জনমনে।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ছিলেন আজহার জাফর শাহ। ২০০৭ সালে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ দেয় কর্তৃপক্ষের কাছে। বিভিন্ন সময় পরীক্ষায় নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে। এমনকি ব্যক্তিগত ক্ষোভের জেরে একসঙ্গে ৮০ শিক্ষার্থীকে ‘শূন্য’ দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। নিয়মিত তিনি মাদক সেবন করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করা হয় এবং আজহার জাফর শাহকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। কিন্তু তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি, নোটিশেরও জবাব দেননি। তাকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও শর্ত পূরণ করতে না পারায় পুনরায় সহকারী অধ্যাপক পদে পদাবনতি দেওয়া হয়। দশ বছর পর ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজহার জাফর শাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

শুক্রবার বিকেলে ঢাবির চারুকলা অনুষদ-সংলগ্ন সড়কে আজহার জাফর শাহের প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান রুবিনা আক্তার এবং সেই গাড়ির বাম্পারে আটকে যান। এরপর এভাবেই রুবিনা আক্তারকে এক কিলোমিটার টেনে নিয়ে যান শিক্ষক আজহার জাফর শাহ। এই ঘটনার পর রাতেই আন্দোলনে নামে ঢাবির শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনে অংশ নেয়া তাসনিম আফরোজ ইমি ঢাকা মেইলকে বলেন, যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর গাড়ি না থামিয়ে অনেক দূর চলে গেছেন ওই শিক্ষক। তাই মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে। ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবি করে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে গেছে, কোনো শিক্ষার্থীই নিরাপদ নয়। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

মর্মান্তিক এই ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এত মানুষের ডাকাডাকির পরও কেন তিনি গাড়ি থামাননি, আমার জানা নাই। উনি কি আসলেই দেখেননি! লুকিং গ্লাসে তাকালেই কিন্তু উনি মহিলাকে দেখতে পেতেন। আমি বলব, এটা হত্যাকাণ্ড।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম ঢাকা মেইলকে বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অভিযোগ ছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। তারপরও উনার মনে ভয় নেই। আইনের শাসন ও মানুষের মনে ভয় না থাকায় এমন কাণ্ড ঘটছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, নিহত রুবিনা আক্তার (৪৫) রাজধানীর তেজকুনী পাড়ার ৭৫/২ নম্বর বাসায় থাকতেন। তার স্বামী ডলার মিয়া ওই বাসার মালিক। গত বছরের ডিসেম্বরে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে একমাত্র সন্তান রুহানকে নিয়েই থাকতেন রুবিনা।

নিহতের বড় ভাই জাকির হোসেন মিলন ঢাকা মেইলকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সব ধরনের খরচ আমরা দিতাম। খরচ আনতেই শুক্রবার বিকেলে মোটরসাইকেলযোগে হাজারীবাগে আমাদের বাসায় যাচ্ছিল রুবিনা। কিন্তু ঘাতক জাফর শাহের নির্মমতায় তার মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। জাফর শাহ একটু সচেতন হলে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হতো না। এ ঘটনায় জাফর শাহের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় শুক্রবার গভীর রাতে পরিবহন আইনে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন রুবিনার ভাই জাকির হোসেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে বহিষ্কৃত শিক্ষক আজহার জাফর শাহকে। বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাফর শাহকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শিশির।

কেআর/জেএম/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর