বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ বিইআরসি!

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ বিইআরসি!

আইন সংশোধনের মাধ্যমে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম সরাসরি বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষমতা সরকারের কাছে দেওয়ার পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের নেতারা বলছেন, এখন গণশুনানি ছাড়াই বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। ফলে ‘বিইআরসি’র হাতে আর কোনো ক্ষমতা থাকছে না। এটা নামকাওয়াস্তে একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। কিছু লাইসেন্স দেওয়া-নেওয়া ছাড়া এর আর তেমন কোনো কাজ থাকবে না। এর মাধ্যমে ‘বিইআরসি’কে ধ্বংসের করে দেওয়ার পায়তারা করা হচ্ছে।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘বিইআরসি’র বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দাম নির্ধারণ, লাইসেন্স প্রদানসহ এই খাতের গুরুত্বপূর্ণ কাজ স্বাধীনভাবে করার ক্ষমতা আছে। বিশেষ করে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করার কারণে সাধারণ জনগণের কাছেও সুপরিচিত বিইআরসি। 

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম সরাসরি বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষমতা সরকারের কাছে আনতে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হয় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে। ফলে এখন থেকে গণশুনানি ছাড়াই জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম ঠিক করতে পারবে সরকারও।

কেন এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিব বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ একটি ছোট সংশোধন নিয়ে আসা হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারই ট্যারিফ নির্ধারণ করতে পারবে। কারণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিইআরসির ৯০ দিন প্রয়োজন হয়।

সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে বিইআরসি ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম।

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, এর মাধ্যমে জ্বালানি খাতকে অন্ধকার করে ফেলা হলো। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন করে এ খাতে সমস্ত প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতা বিনষ্ট করা হয়েছে। মূল্যহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণশুনানি থাকায় মানুষের কাছে তা উন্মুক্ত হচ্ছিল। কিভাবে মূল্য বেশি নেওয়া হচ্ছে, লুণ্ঠন হচ্ছে সেটা মানুষ জানত। সরকারের হাতে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা নিয়ে যাওয়ায় সেই জায়গাটাও এখন অন্ধকারে চলে গেল। কমিশনের আর কোনো কার্যকারিতা নাই। সরকার যেখানে মূল্যহার নির্ধারণ করে, সেখানে বিইআরসি ক্লিনিক্যালি ডেড।

আইএমএফকে খুশি করতে সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে তো জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভোক্তাদের একটা মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে এই সুযোগটা থাকছে না। এখন সরকারের যখনই প্রয়োজন হবে নানা অজুহাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করবে। এটাকে আইনি আবরণ দেওয়ার জন্য খুবই স্বেচ্ছাচারিভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা কাজ করবে। এ ব্যাপারে স্বচ্ছতার প্রশ্ন থাকছে না, জবাবদিহির প্রশ্ন থাকছে না।

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দায় মুক্তি একটা আইন আছে। নাগরিক হিসেবে সংক্ষুদ্ধ হলে আমি যে মামলা করব সে সুযোগ নেই। এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মানে অগণতান্ত্রিকভাবে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গণশুনানির ব্যাপারেও আমাদের সমালোচনা ছিল বা আছে। এটাও লোকদেখানো। আগে তারা বাড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেয়, গণশুনানি করে সেটা থেকে দায় মুক্তি পায়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) সুন্তুষ্ট করতে সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, এখন সরকার ইচ্ছা করলেই যে কোনো সময়, যে কোনো দিন, মাসে একবার দুইবার বা তিনবার, যখনই প্রয়োজন মনে করবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে তারা মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবে। আইএমএফকে সুন্তুষ্ট করতে সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আইএমএফ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম টাকা ছাড় দেওয়ার কথা, তাদেরকে দেখানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত। এমনকি আইএমএফ কৃষিতেও ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথা বলেছে। সেটা হয়তো পর্যায়ক্রমে করবে। সরকার যে সব ক্ষেত্রে বেপরোয়া, এটা তার সর্বশেষ একটা নজির।

এদিকে ‘বিইআরসি’কে ধ্বংস করার পায়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ।

তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, এর মাধ্যমে বিইআরসির হাতে আর কোনো ক্ষমতা থাকছে না। এটা নামকাওয়াস্তে একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তাদের কিছু লাইসেন্স দেওয়া-নেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ থাকবে না।

টিএই/জেএম/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর