মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন খুলনার তিন আইনজীবী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন খুলনার তিন আইনজীবী

যুগ্ম জেলা জজ নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তিন আইনজীবীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আদালত। ভবিষ্যতে বিচারকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না এমন সতর্কবার্তা দিয়ে রায় দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে সব জেলা আইনজীবী সমিতিকে বার্তা দিতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) এ বিষয়ে আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।


বিজ্ঞাপন


এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ বিষয়ে শুনানির সময় আদালত অবমাননার অভিযোগের এক শুনানির সময় বিচারপতি বলেছেন, খুলনায় ভালো মানুষ আছে, আবার এরশাদ শিকদারও ছিল। আপনারা তো খুলনা বারের সম্মান নষ্ট করে দিয়েছেন।

এ সময় আদালত আরও বলেন, আপনারা তো খুলনা বারের সম্মান নষ্ট করে দিয়েছেন। আপনাদের সঙ্গে আদালত বা বিচারকের কোনো সমস্যা হলে তার চেয়ে বড় কোর্টে প্রতিকার চাইতে যেতে পারতেন। যাওয়ার সুযোগ ছিল। আলাদা কোরাম ছিল। সেগুলো না করে আপনারা নিজেরা ক্যাডারের মতো আচরণ করলেন আদালতের সঙ্গে। আপনারা কেবল শুধু আদালত অবমাননাই নয়, আপনারা অপরাধও করেছেন।

পরে তিন আইনজীবীর পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। তারা বলেন, বিচারকের সঙ্গে এরকম ঘটনা আর কোনোদিন ঘটাবে না।

এর আগে গত ১ নভেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে অসদাচরণ ও আদালত অবমাননার ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট।


বিজ্ঞাপন


২২ নভেম্বর তাদের হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। সভাপতি ছাড়া অন্য দুই আইনজীবী হলেন, শেখ নাজমুল হোসেন ও শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু।

এ ঘটনায় গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি বরাবরে একটি পত্র দেন নির্মলেন্দু দাশ। সেটি প্রধান বিচারপতি বরাবরে উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল। ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেন। সে অনুসারে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে আদালত রুল জারি করে তিন আইনজীবীতে তলব করেন।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের নথিতে বলা হয়, খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশ এক পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি মামলার রায়ের জন্য দিন ঠিক করা ছিল। তবে বাদীপক্ষে আইনজীবী শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু মামলাটি রায় থেকে প্রত্যাহার করে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য সময়ের দরখাস্ত করেন। তিনি মৌখিকভাবে ‘এই মোকদ্দমায় বারের সভাপতি সাহেব আবার জেরা করবেন, আমরা একটা সময়ের দরখাস্ত দেব’ উল্লেখ করে এজলাস ত্যাগ করেন।

পরে অন্য মামলার সাক্ষী চলাকালে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু, শেখ নাজমুল হোসেনসহ একাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে শোরগোল করতে থাকেন। তখন বিচারক বলেন, ‘আপনারা বসেন’। কিন্তু তারা তার কথায় কর্ণপাত না করে তাদের মতো শোরগোল চালিয়ে যান। এরমধ্যে খুলনা বারের সাধারণ সম্পাদক জেরারত অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি দত্তকে (অন্য একটি মামলায় পিযুষ কান্তি সাক্ষীকে জেরা করছিলেন) জোরের সঙ্গে বলেন, ‘জেরা শেষ করেন।’

পিযুষ বাবুর জেরা শেষ হলে বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কৈফিয়ত তলবের সুরে বলেন, ‘আমরা একটা মোকদ্দমায় উভয়পক্ষ সময়ের দরখাস্ত করেছিলাম, আপনি সেই দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছেন। এরপর জিপি সাহেব হাতে লেখা দরখাস্ত দিয়েছেন। তারপর সাক্ষী হয়েছে। পরে আমরা সময়ের দরখাস্ত দিলে নেওয়া হয়নি। কেন নেওয়া হয়নি এবং সময়ের দরখাস্ত কেন না-মঞ্জুর করলেন, আমাকে বলতে হবে।’

তিনি (উক্ত বিচারক) বলেন, ‘সভাপতি সাহেব, আপনি এভাবে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন?’ উনি বলেন, ‘কীভাবে পারি। কোনভাবে জানব, বলেন।’ তিনি ( বিচারক) বলেন, ‘আপনি আমার কাছে সময়ের আবেদন করছেন। আমি না-মঞ্জুর করছি। আদেশে কারণ দেখে নেবেন। কিন্তু আপনি আমার কাছে এখন কৈফিয়ত তলব করলে তো হবে না।’ তখন তিনি (উক্ত আইনজীবী) বলেন, ‘কৈফিয়ত চাচ্ছি তো।’
 
এক পর্যায়ে বিচারককে উদ্দেশ্য করে সভাপতি বলেন, আগামী রোববার থেকে কোর্ট বয়কট। আমরা মিডিয়ার সামনে প্রমাণ করব আপনি দুর্নীতিবাজ। আপনার বিরুদ্ধে যা যা করার দরকার আমরা করব। আপনার যা করার আছে, আপনি করেন।

নথিতে আরও বলা হয়, আইনজীবী নাজমুল হোসেন অশ্রাব্য ভাষায় একটি গালি দেন। অ্যাডভোকেট পাপ্পুও গালাগালি করেন। সভাপতির সঙ্গে থাকা অন্য আইনজীবীরাও অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন এবং গালাগালি করেন। তারপর তিনিসহ তার সঙ্গে আসা সব আইনজীবী অন্য আইনজীবীদের বের করে নিয়ে যান। পাবলিককেও বের করে নিয়ে যায় তারা। যাওয়ার সময় আদালতের দরজায় ধমধম করে বাড়ি দিয়ে যান।

নথিতে বলা হয়, একটি বিচারিক বিষয়ে বারের সভাপতি তার সঙ্গীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন তাতে একজন বিচারক হিসেবে তিনি হতাশ, অপমানিত হয়েছেন এবং বিচার বিভাগের মর্যাদার ওপর তারা আঘাত হেনেছেন ও চরমভাবে আদালত অবমাননা করেছেন।

এআইএম/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর