পুরান ঢাকার অলিগলিতে ফুটবল বিশ্বকাপের আমেজ

ফিফা বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি মাত্র দুই দিন। বরাবরই ফুটবলের এই উন্মাদনা বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে যায়। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর পুরান ঢাকার অলিগলিতেও এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের আমেজ। ফুটবলের এই আসরকে ঘিরে একদিকে যেমন বিভিন্ন দেশের পতাকা বিক্রির ধুম পড়েছে, তেমনি পছন্দের দেশের পতাকায় ভরে গেছে পুরান ঢাকার বাসা-বাড়িগুলোর ছাদ।
বিশ্বকাপকে ঘিরে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সরেজমিনে ভিক্টোরিয়া পার্ক, শাঁখারী বাজার মোড়, রায় সাহেব বাজার, লক্ষ্ণী বাজার, বংশাল, তাঁতিবাজার মোড়, নবাবপুর ও ওয়ারী এলাকায় ঘুরে পতাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে অসংখ্য ফেরিওয়ালাদের। আবার দোকানেও চলছে পতাকা বিক্রির ধুম। এমনকি বিভিন্ন পরিবহনগুলোর সামনেও ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া প্রিয় দেশের পতাকা সাঁটাতেও দেখা গেছে।
এ দিন পুরান ঢাকার অলিগলিতে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন দেশের পতাকা বিক্রি করছিলেন এহসান। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, শহরে এক-দেড় মাস আগে থেকেই বিশ্বকাপের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। সমর্থকরা বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে তাদের প্রিয় দেশের পতাকা আগে থেকেই কিনে রাখছেন। আমি ছোট-বড়-মাঝারি সব ধরনের পতাকা বিক্রি করি। এরমধ্যে ছোট বা হাতে রাখার মতো যে পতাকা, সেটা বেশিরভাগ বাচ্চারাই কিনছেন। আর বড় সাইজের পতাকাগুলো বাসার ছাদে টাঙানোর জন্য কিনে নিয়ে যায় যুবকরা। অনেকে এর সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকাও নিচ্ছেন।
ঢাকার অলিগলি হেঁটে বাংলাদেশ, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন, সৌদি আরব, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, জার্মানিসহ বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নিতে যাওয়া বিভিন্ন দেশের পতাকা বিক্রি করেন বংশালের সুরতহাল স্টোরের কাজী রফিক। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই মূলত পতাকা বিক্রি বেড়ে গেছে। এখন তুলনামূলক বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশ, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা। চকবাজার থেকে আমি পতাকাগুলো পাইকারি দরে এনে বিক্রি করছি।
এদিকে, সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়- টিকাটুলির স্বামীভাগে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের পতাকার আদলে আল্পনার ছোঁয়া পেয়েছে প্রতিটি দেয়াল। শুধু পতাকাই নয় ফুটবল বিশ্বের কিংবদন্তী ফুটবলারদের ছবিও স্থান পেয়েছে এসব দেয়াল। মেসি, ম্যারাডোনা, পেলে, রোনালদো, নেইমারসহ অনেক তারকা খেলোয়াড়রা আছেন এই তালিকায়। সেই সঙ্গে পছন্দের তারকার আঁকানো আল্পনা ঘিরে সেলফি তুলতেও রীতিমতো ভিড় দেখা গেছে স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজস্ব অর্থায়নে এসব আর্টওয়ার্ক করেছেন একঝাঁক যুবক। এতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যেন আনন্দের শেষ নেই। সেই সঙ্গে এলাকাবাসীও সবমিলিয়ে মেতেছেন ফুটবল বিশ্বকাপের আমেজে।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় আর্জেন্টিনা সমর্থকদের পতাকা নিয়ে ব্যাপক শোডাউনেও দেখা মিলেছে। এ সময় সব বয়সী মানুষদের অংশগ্রহণে শোডাউন রীতিমতো যেন গণজোয়ারে পরিণত হয়। দুটি প্রাইভেটকার ছাড়াও দুইটি পিকআপ ও ১০টিরও বেশি বাইকসহ সবমিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক সমর্থক এই শোডাউনে অংশগ্রহণ করেন।
অন্যদিকে, ছুটির দিনে সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন সোহাগ। তবে রাস্তায় বের হতেই চোখ পড়ে জার্সি বিক্রেতার। এতে বাচ্চারও জার্সি কেনার আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে সন্তানের পছন্দকেই প্রাধান্য দিতে চান সোহাগ। বলেন, আমি যে দেশই সাপোর্ট করি না কেন, বাচ্চা যে রংয়ের জার্সি পছন্দ করছে সেটাই কিনে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, আগামী ২০ নভেম্বর মরুভূমির দেশ কাতারে ২২তম ফিফা বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
/আইএইচ