শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পর্যটন ব্যবসায় আশা দেখাচ্ছে পদ্মা সেতু

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

পর্যটন ব্যবসায় আশা দেখাচ্ছে পদ্মা সেতু

মাত্র কয়েক বছর আগেই ঢাকা থেকে সহকর্মীদের নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়েছিলেন তারিকুল ইসলাম। ফেরিতে পদ্মা পার হওয়াসহ ছোট লঞ্চে সবমিলিয়ে আট ঘণ্টায় পৌঁছান গন্তব্যে। নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর খুলনায় পৌঁছানোয় ট্যুরের পুরো পরিকল্পনাই যেন ভেস্তে যেতে বসেছিল। এ নিয়ে ট্যুর বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে মনোমালিন্যও হয়েছিল তারেকের।

তবে গত মার্চের পর থেকে সুন্দরবনপ্রেমীদের বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছানো যেন এখন হারিয়ে যাওয়া কেনো স্মৃতি। কারণ, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার খুলে দেওয়ায় আগের চেয়ে অর্ধেক সময়েই খুলনা-মোংলায় পৌঁছে যাচ্ছেন পর্যটকরা। বর্তমানে ঢাকা থেকে মাত্র চার ঘণ্টায় যাওয়া যায় খুলনায়। কখনো আবার সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। যে কারণে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনটিতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। সেই সঙ্গে খুলনা বা মোংলা থেকে পর্যটকরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুরে দেখতে পারছেন সবুজে ঘেরা সুন্দরবন।


বিজ্ঞাপন


Sundorbonসুন্দরবন ভ্রমণে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুই এখন হয়ে উঠেছে আশীর্বাদ। সেই সঙ্গে সুন্দরবন-কেন্দ্রিক পর্যটক এবং এই খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও স্বস্তি নেমে এসেছে। হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখেও।

গত কয়েক যুগ ধরে মোংলা থেকে ট্রলারে পর্যটকদের সুন্দরবন আনা-নেওয়ার সঙ্গে জড়িত গিয়াস উদ্দিন। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, এমনও হইছে আসার কথা সকাল ৮টায়, লোকজন ঘাটে আসছে দুপুর ১টায়। ওইসময় সর্বোচ্চ একটা জায়গা ঘুরাইয়া ফিরতে ফিরতে রাত হইয়া গেছে। পদ্মা সেতু চালুর পর ভোরে কেউ নামলে সারাদিন ঘুরে আবার সন্ধ্যার মধ্যে বাসে চলে যাইতে পারতেছে।

Sundorbonঅতীত-বর্তমানের তুলনামূলক হালচাল


বিজ্ঞাপন


সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সংগঠন ট্যুরস অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালুর আগে এবং পরে পর্যটকদের উপস্থিতির মধ্যে বেশ ফারাক। পর্যটক বেশি আসায় নিত্যদিন নতুন নৌযান নামছে। শুধু তাই নয়, এসব নৌযানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও সংযোজন করা হচ্ছে। যদিও বন বিভাগের পক্ষ থেকে বেধে দেওয়া নিয়ম কানুনের কারণে চাইলেও নৌযানে অতিরিক্ত পর্যটক বহন করা সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও অপারেটরদের সংগঠনের সদস্য ছিলেন মাত্র ৩৫ জন। সেখানে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। তবে আপাতত আর সদস্য বাড়াতে চায় না কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সংগঠনের সদস্য ও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে জামান পিকলু ঢাকা মেইলকে বলেন, জাহাজে রাতযাপন করে যদি সুন্দরবনে কেউ আসতে চায় তাহলে অবশ্যই সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যম হয়ে আসতে হবে। প্রতিদিন প্রচুর মানুষের ফোন পাচ্ছি। গ্রুপ ট্যুর, করপোরেট ট্যুরে আসতে চান অনেকে। পরিবার নিয়েও অনেকে আসছেন। কিন্তু জাহাজ ফাঁকা না থাকায় আমরা তাদের ঘুরতে আসার সুযোগ দিতে পারছি না।

অক্টোবর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি, কখনো মার্চ মাস পর্যন্ত মূলত সুন্দরবন ঘিরে পর্যটন ব্যবসা জমজমাট থাকে। আগে এই সময়টায় অনেকের ব্যবসা মন্দা গেলেও এখন যেন দম ফেলার সুযোগ নেই।

Sundorbon

কেন মানুষের সুন্দরবনে ঘুরতে আসার আগ্রহ বাড়ল- এমন প্রশ্নের জবাবে পিকলু বলেন, এখন সবাই বছরে নিয়ম করে একবার হলেও ঘুরতে বের হয়। আর পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আরও বেশি সুবিধা হয়েছে। বলতে পারেন এটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ।

বিষয়টিতে বন বিভাগের একজন নিরাপত্তারক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যখন মৌসুম শুরু হয়েছে তখন থেকেই লোকজনের চাপ বাড়তেছে। যে কারণে নিরাপত্তাও বাড়াতে হচ্ছে। লোকজন অনেকে পশু-পাখিদের ডিস্টার্ব করে। আবার বাঘের একটা ভয় তো আছেই।

দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে অর্থনীতির মন্দাভাব

পদ্মা সেতুর কারণে সুফল পেলেও দেশের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের মনে কিছুটা দুশ্চিন্তার ছায়া ফেলেছে। তারা বলছেন, করোনার সময় দীর্ঘদিন সুন্দরবনে পর্যটকদের জন্য বন্ধ ছিল। আবার চালুর পর মুখিয়ে থাকা লোকজন আসছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হলে তখন আগ্রহ থাকলেও অনেকে আসার সুযোগ পাবেন না। শুধু তাই নয়, অনুকূল আবহাওয়া ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেদিকেও তাকিয়ে আছেন ব্যবসায়ীরা।

Sundorbonনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টুর অপারেটর ঢাকা মেইলকে বলেন, সামনের বছর ভোট নিয়ে কি অবস্থা হয় আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এখন তো অর্থনীতির অবস্থাও খারাপ। ডিসেম্বর-জানুয়ারি সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে। তখন কেমন হবে পরিস্থিতি তা নিয়ে সবাই টেনশনে আছি।

এদিকে, চলতি মৌসুমে সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, নিলকমল, পক্ষীর চর, দুবলার চর, আলোরকোল হিরণ পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্পটে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন বোট মালিক-কর্মচারী এবং টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। প্রত্যেক গ্রুপের সঙ্গে একজন করে বন বিভাগের অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরীও দেওয়া হচ্ছে।

Sundorbonগ্রুপভিত্তিক ট্যুরে সুন্দরবন ঘুরতে আসা ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল হাদী ঢাকা মেইলকে বলেন, কক্সবাজারসহ দেশের অনেক জায়গায় আমরা ভ্রমণে গেলেও এবার শুধুমাত্র পদ্মা সেতুর কারণে সুন্দরবন ঘুরতে আসা। এতে একদিকে পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফল ভোগ করার সুযোগ পেলাম। অন্যদিকে ফেরির বিড়ম্বনার বদলে আগের চেয়ে অর্ধেক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে তৈরি হওয়া পদ্মা সেতুর কল্যাণে। নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর