শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

জীবনে সিগারেটও স্পর্শ করেনি ফারদিন, চনপাড়ার গল্প ‘কাল্পনিক’

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

জীবনে সিগারেটও স্পর্শ করেনি ফারদিন, চনপাড়ার গল্প ‘কাল্পনিক’

বুয়েটছাত্র ফারদিন নুর পরশ হত্যার ঘটনায় ‘ধোঁয়াশা’ যেন কিছুতেই কাটছে না। ক্ষণে ক্ষণে মিলছে নতুন সব তথ্য। সেই সঙ্গে হত্যার কারণ ও নেপথ্যে কারা তাও এখনও অজানা। এদিকে, ফারদিনের বান্ধবী বুশরার দেওয়া তথ্যও এলোমেলো। বর্তমানে তার মুঠোফোনের লোকেশনের সূত্র ধরে চলছে তদন্ত। তবে প্রতিনিয়তই নতুন মোড় নিচ্ছে এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ‘রহস্য’।

এতসবের মাঝে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) মাদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নারায়ণগঞ্জের ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়েও কৌতূহলের শেষ নেই। যদিও ফারদিনের বাবার দাবি চনপাড়ার সেই গল্প কাল্পনিক।


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিনের সঙ্গে প্রায় ১৬ মিনিট কথা হয় ঢাকা মেইলের। একান্ত আলাপচারিতায় এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনাসহ হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার তিনটা ছেলের কখনোই কেউ সিগারেট খায়নি। সেও কখনোই বাসাবাড়ি বা ক্যাম্পাসে সিগারেট খেয়েছে বলে শুনিনি। পাড়া-প্রতিবেশীরাও জানে না। যে ছেলে সিগারেট খায় না, সেই ছেলে পরীক্ষার আগে মাদক কিনতে নারায়ণগঞ্জ যাবে! ফারদিন মাদকসেবী হলে তার বুয়েট ক্যাম্পাস বা ঢাকার আশপাশ থেকেই মাদক কিনে সেবন করত বলেও মনে করেন তিনি।

>> আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যা মামলা ডিবিতে, চলছে সিসি ক্যামেরা যাচাই


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক কারবারি নিহতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেল- এটায় আমার কিছু যায় আসে না। যে ছেলেটা কোনোদিন সিগারেট খাইনি, সে কীভাবে চনপাড়ায় গেল?’

Fardinনূর উদ্দিন দাবি করেন, ছেলের হত্যাকাণ্ডটি ভিন্নখাতে নিতে এবং প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতেই কেউ এমন ‘কাল্পনিক গল্প’ সাজিয়েছে। অবশ্য এ জন্য তিনি হতাশও নন। তার বিশ্বাস- মামলাটির বর্তমান দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রকৃত ঘটনা বের করতে সক্ষম হবে। সবমিলিয়ে এখনও তাদের ওপর ভরসা রাখতে চান তিনি।

ফারদিনের বাবার এত প্রশ্নের জবাব দেবে কে?

ঘটনার রাতে ফারদিন ঢাকা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ায় মাদক কিনতে কেন যাবেন, হত্যাকারীরা তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কেন আঘাত করল এবং তারা তার সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো কেনই বা নিল না এমনসব প্রশ্ন তুলেছেন নূর উদ্দিন। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, সে কেন ওই জায়গা যাবে? মাদক তো ঢাকায় সহজে পাওয়া যায়। তাকে কেন সেখানে যেতে হবে? আর কেন তাকে আট থেকে ১০ জন মিলে পিটিয়ে মারবে?

নূর উদ্দিন আরও বলেন, তারা (অপরাধীরা) অন্য কোথাও আঘাত না করে কেনই বা তার বুকে, হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কে আঘাত করল? তার মানে, তাদের কাছে তার ব্রেন, হৃৎপিণ্ড ও বুক মূল্যবান মনে হয়েছে। এ জন্য তারা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেসব স্থানে আঘাত করেছিল। আর তাকে হত্যার পর তার কোনোকিছু না নিয়ে ছেড়ে দেবে এটা কি করে হয়?

Fardinএটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাকে হত্যার পর কি মাদক কারবারিদের কাছে মোবাইল ও মানিব্যাগ মূল্যবান মনে হবে? যদি তারাই তাকে হত্যা করবে তাহলে সেসব মূল্যবান জিনিস কেন নিল না, এটা একটা প্রশ্ন।’

>> আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যা: বুশরার এলোমেলো তথ্য, রামপুরার পর আর মেলেনি ফুটেজ

নূর উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে কখনোই সিগারেট খায়নি। আমার সন্তান মারা গেছে, আমি বিচার প্রার্থী। ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্যই ‘চনপাড়ার গল্প’ সাজানো হয়েছে। তাকে মাদক কেনার জন্য সেখানে যাওয়ার দরকার নাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ বা ঢাকার আশপাশেই এটি সহজে পাওয়া সম্ভব। সে কেন জনসন রোডে যাবে, পুরান ঢাকায় যাবে। যারা তার চনপাড়ার গল্প সাজিয়েছে তারা কোনো উদ্দেশ্যেই এটি করেছে।’

Fardin

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই রিপোর্টারের তো উচিত ছিল কোন সংস্থা এটা জানালো তা উল্লেখ করা। কিন্তু তা তো করা হয়নি। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডটির প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই এমন কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।’

এ সময় ঘটনার সঙ্গে চনপাড়ার গল্প কোনোভাবে যায় না ও ফারদিন কোনোভাবে সেখানে যেতে পারে না বলেও যোগ করেন তিনি।

>> আরও পড়ুন: আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন ফারদিনের বাবা

নূর উদ্দিন বলেন, আমার প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন ও শাসন ব্যবস্থার ওপর আস্থা আছে। তাই বলব- যারা এমন কাল্পনিক গল্প সাজাচ্ছে তারা ভিন্নখাতে নিতেই এমনটি করছে। তবে ডিবির ওপর ভরসা রাখতে চাই। আমার বিশ্বাস, ডিবির তদন্তে প্রকৃত জড়িতরা বেরিয়ে আসবে। আমরা পটিজিভ কিছু ভাবব।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৫ নভেম্বর) থেকে নিখোঁজ ছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর গত সোমবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। পরে লাশের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

সবশেষ বুধবার (৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একজনের নাম উল্লেখ করে বাকীদের অজ্ঞাত দেখিয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে বুশরা রিমান্ডে আছেন।

এমআইকে/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর