মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ

সাকিব আবদুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৭ মার্চ ২০২২, ০৫:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ
বায়ুদূষণ কমাতে পাঁচ জেলার অবৈধ ইটভাটা ভেঙতে অ্যাকশনে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ | ছবি: ঢাকা মেইল

কিছুদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে দেশের বায়ুদূষণ। প্রায় সব জেলায়ই আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বায়ুর মান। এরই প্রেক্ষিতে উঠে এসেছে দেশের অবৈধ ইটভাটাগুলোর প্রসঙ্গ। সম্প্রতি দেশের পাঁচ জেলার সব অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশনাও দিয়েছেন হাইকোর্ট। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাচ্ছে অধিদপ্তর।

এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনাটি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে শুধু ইটভাটা ভাঙলেই বায়ুদূষণ কমবে কি-না সেটিও আলোচনায় আসছে।


বিজ্ঞাপন


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ইটভাটা ভাঙলেই বায়ুমানের রাতারাতি কোনো উন্নতি হবে না। এ জন্য দূষণের প্রধান পাঁচটি উৎসই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে অবৈধ ভাটা ভাঙলে দূষণ কিছুটা কমবে। তাই এর পাশাপাশি দূষণের অন্য কারণগুলোর প্রতিও নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানী ও আশপাশের মানুষ বায়ুদূষণে অতিষ্ঠ। ঘর থেকে বের হলেই নাকে-মুখে কাপড় ঢেকে পথ চলতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে বায়ুদূষণ নিয়ে গত পয়লা মার্চের এক রায়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরের সব অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ওই রায়ে বিচারক বলেন, জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। শুধু সেমিনারে গিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বললেই হবে না। বায়ুদূষণে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুমানের উন্নতির জন্য দূষণের প্রধান পাঁচটি উৎসই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এগুলো হলো-


বিজ্ঞাপন


  • নির্মাণ ও সংস্কার কাজ এবং রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি
  • ইটভাটা
  • ফিটনেসবিহীন যানবাহন
  • ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো
  • শিল্প কারখানা।

তাদের মতে- সমন্বিত, বিজ্ঞানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশীদারিত্বমূলক এবং টেকসই পদক্ষেপ ছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- নির্দেশনার আওতায় থাকা ওই পাঁচ জেলায় মোট ৩১৯টি অবৈধ ইটভাটা আছে। যেহেতু হাইকোর্ট বলেছেন, ১৫ দিনের মধ্যে সব ভাঙতে হবে, সুতরাং এই কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখার পরিচালক মাসুদ হাসান পাটোয়ারী ঢাকা মেইলকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার পর আর কোনো কথা চলে না। ভাঙতে বলা হয়েছে, আমরা ভাঙব।

ইটভাটাগুলো ভাঙতে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সেকথা ভাবছি না। নির্দেশনা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।

অন্যদিকে, অধিদপ্তরের আইন শাখার পরিচালক খোন্দকার মো. ফজলুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, রায়ের কপি এখনও আমরা হাতে পাইনি। তবে অ্যাকশনে নামতে আমরা প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামারুজ্জামান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, বায়ুদূষণের জন্য এককভাবে ইটভাটা দায়ী না। অবৈধ ভাটা ভাঙলে দূষণ কিছুটা কমবে কিন্তু পুরোপুরি দূর হবে না। বায়ুদূষণ ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হলে দূষণের পাঁচটি প্রধান কারণের সবগুলোতেই নজর দিতে হবে।

ক্যাপসের এই কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে আরও বলেন, কাজ করতে হবে সমন্বিত, বিজ্ঞানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশীদারিত্ব এবং টেকসইভাবে। সমন্বিত মানে সরকারি সব দপ্তরকে সমন্বয় করে পরিকল্পনা করতে হবে। কোন জায়গায় কী থেকে দূষণ হচ্ছে, তা বিজ্ঞানসম্মতভাবে বের করতে হবে। অন্তর্ভুক্তি ও অংশীদারিত্বের কথা হচ্ছে- প্রতিটি ভাটা বা কাজের সঙ্গে কিছু মানুষের জীবিকাও যুক্ত থাকে। তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে সেটাও ভাবতে হবে। আর আজ ইটভাটা বন্ধ করলে দুদিন পর যদি সেটা আবারও চালু হয়ে যায়, তাহলে তো আর সেই পদক্ষেপ টেকসই হবে না। কীভাবে টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেটাও ভাবতে হবে।

দেশের বায়ুমান নিয়ে নিয়মিত জরিপ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণার তথ্য প্রকাশিত হয়। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণায় উঠে আসে নানা তথ্য। যেখানে বলা হয়- গত ছয় বছরে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন ভালো বায়ু গ্রহণ করেছে। আর বাকি অধিকাংশ দিন বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর থেকে দুর্যোগপূর্ণ ছিল।

আরও পড়ুন: ঢাকার বাইরে স্থায়ী ঠিকানা খোঁজার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

রাজধানীর বাতাসকে বিষিয়ে তোলার জন্য সবচেয়ে বেশি (৩০ শতাংশ) দায় অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণ কাজের। ২৯ শতাংশ দূষণের উৎস ইটভাটা ও শিল্পকারখানা। এছাড়া অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে যানবাহনের কালো ধোঁয়া (১৫ শতাংশ), আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ (১০ শতাংশ), গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষণ (৯ শতাংশ) এবং বর্জ্য পোড়ানোর কারণে ৭ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

ক্যাপসের প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, এরই মধ্যে রাজধানীর বায়ুদূষণের উৎসের একটি বড় বদল ঘটেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১২ সালের জরিপ অনুযায়ী ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস ছিল ইটভাটা (৫৮ শতাংশ)। এক যুগ পর ২০২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক জরিপে বায়ুদূষণের মূল উৎস বলা হয় যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়াকে (৫০ শতাংশ)। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত ক্যাপসের গবেষণা বলছে- ঢাকার বাতাসে দূষিত বস্তুর উৎস হিসেবে ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়ার স্থান দখল করেছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের মতো বিষয়গুলো।

এসএ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর