শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আশা দেখাচ্ছে সৌরশক্তি

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২২, ১০:৪৪ এএম

শেয়ার করুন:

আশা দেখাচ্ছে সৌরশক্তি

সারা বিশ্বেই যখন জ্বালানি সংকটে টালমাটাল অবস্থা তখন নতুন করে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। একটা সময় সারা বিশ্বেই তেল, গ্যাস, কয়লাসহ প্রাকৃতিক জ্বালানির মজুদ শেষ হয়ে যাবে। তখন নবায়নযোগ্য শক্তি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন গবেষকরা। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে পুরো বিশ্ব।

আগামী ২০ বছরের মধ্যে চাহিদার ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎই নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সম্পদশালী দেশগুলো। একই লক্ষ্যে বাংলাদেশেও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রণয়ন করা হয়েছে ‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-২০৪১। এছাড়াও আগামী এক বছরের মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ আসবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশের আবহাওয়া সৌর বিদ্যুতের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সরকারও সৌর শক্তি উৎপাদনে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ী, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিলেটে প্রথম সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) কর্তৃক সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯৬ সালে এসএইচএস চালু হওয়ার পর থেকে এটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইডকল এর মাধ্যমে সরকার কর্তৃক গৃহীত সমন্বিত কর্মসূচির কারণে এর সংখ্যা বাড়ছে।

আরও পড়ুন: লোডশেডিংয়েও অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল, অতিষ্ঠ গ্রাহক

Energy

সোলার হোম সিস্টেম একটি বিশাল এবং বিশ্বস্ত সিস্টেম এবং এর সফলতার জন্য অনন্য গ্রামীণ ক্রেডিট এবং ‘কস্ট বাই ডাউন’ সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রামীণ বাড়িগুলো এর আওতায় এসেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এবং বিনিয়োগকারীদেরকে সরকার বিভিন্ন প্রকার প্রণোদনা প্রদান করছে। সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন: বাংলাদেশ ব্যাংক, ইডকল এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু নবায়নযোগ্য জ্বালানি পণ্য যেমন: সোলার প্যানেল, সোলার প্যানেল প্রস্তুতের উপাদান, চার্জ কন্ট্রোলার, ইনভার্টার, এলইডি লাইট, সৌরচালিত বাতি এবং বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র এর উপর সরকার শুল্ক অব্যাহতিমূলক প্রণোদনা প্রদান করেছে। সোলার হোম সিস্টেম এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সরকারি কয়েকটি কর্মসূচি যেমন: সৌর সেচ, সৌর মিনি/মাইক্রো গ্রিড, সোলার পার্ক, সোলার রুফটপ, সোলার বোটিং ইত্যাদি শুরু করেছে।


বিজ্ঞাপন


২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় সরকার। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ন্যাশনাল সোলার রোডম্যাপ, ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালায় ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী- নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্রেডা-ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, তদারকিকরণ, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণের মতো কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাচ্ছে।

Energy

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বছরভিত্তিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্পদ মূল্যায়ন ও নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রোডম্যাপ, ২০৩০ অনুসারে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি সৌর-বিদ্যুতের জন্য খসড়া রোডম্যাপ, ২০৪১ নিয়েও পর্যালোচনা চলছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি হচ্ছে বিশ্বের ভবিষ্যৎ বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি হচ্ছে বিশ্বের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের জন্যও তা জরুরি। ভবিষ্যতে যেটা আমাদের জন্য সবদিক থেকে উপকারী, সবচাইতে সুলভ, সবচেয়ে নিরাপদ- সেই জ্বালানিতে সরকারের তেমন মনোযোগ নেই। এ বিষয়ে খুব বেশি গুরুত্বও নেই তাদের। সরকার অনেক সময় বলে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন করবে- বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-ফোরাম আছে, সেসবের জন্য এসব কথাবার্তা বলা হয়। বাস্তবে সরকার কয়লা-পারমানবিকের দিকেই আগ্রহী বেশি। এটার পেছনে কোনো যৌক্তিকতা নেই। চলমান এই জ্বালানি সংকটের মুহূর্তে এখন একমাত্র নবায়নযোগ্য জ্বালানিই পারে আমাদের এই সংকট থেকে উত্তরণ করতে। তাই এটাতে জোর দেওয়া ছাড়া সরকারের কোনো বিকল্প নেই।’

আরও পড়ুন: ‘বিদ্যুৎ সংকটের দায় জ্বালানি উপদেষ্টা এড়াতে পারেন না’

Energy

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমাদের দেশে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, বায়োফুয়েল, জিওথার্মাল, নদীর স্রোত ও সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদিকে শনাক্ত করা হয়েছে। অনেকে বলে থাকেন আমাদের দেশে বায়ুশক্তির মাধ্যমে জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব নয়। আমি মনে করি এটা বড় উৎস হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর সম্ভাবনা এখন আরও বেড়েছে। শিল্পকারখানা, সেচকাজ, বাসাবাড়িতে ব্যবহার- যে কোনো প্রয়োজনেই এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়।’

এদিকে আগামী এক বছরের মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ আসবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গত ২৭ অক্টোবর রাজধানীর মহাখালির ব্রাক সেন্টারে আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নিয়ে এমন আশ্বাস দেন তিনি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্প কারখানাগুলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চায়। উচ্চমূল্যে গ্যাস আনলেও ব্যবসায়ীদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী এক বছরের মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ আসবে।

টিএই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর