রোববার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

২-৭ লাখে বিক্রি হয় বিমানের প্রশ্ন, ফাঁস হয় আগের রাতে: ডিবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৩:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ২ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় পরীক্ষার আগের রাতে। প্রশ্নপত্র কিনেও যারা টাকা দিতে পারেননি তাদের সঙ্গে বাড়ি, জমি, ভিটেমাটি দেওয়ার চুক্তি হয় বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।

শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। এরপর প্রশ্নের হুবহু কপি হোয়াটসঅ্যাপে পরীক্ষার্থীদের মোবাইলে পাঠানো হয়। এজন্য প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে চক্রটি ২ থেকে ৭ লাখ টাকা আদায় করে। এছাড়াও যারা টাকা দিতে পারেননি তাদের কাছ থেকে আলাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। যাতে লেখা ছিল তারা টাকা দিতে না পারলে সেই টাকা বাবদ তাদের জমি, ভিটেমাটি বা সম্পত্তি নেওয়া হবে। পরীক্ষার বিষয়ে করা কমিটিকে ফাঁকি দিয়ে তারা প্রশ্ন ফাঁস করেছে চক্রটি।

গতকাল শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বিকেল তিনটায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর কর্তৃপক্ষ ঘণ্টাখানেক আগে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেয়। এমনটি জানার পরই ক্ষুব্ধ হয়ে উত্তরায় সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন পরীক্ষার্থীরা।

db-2


বিজ্ঞাপন


বিমানের প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকায় পরীক্ষার আগে শুক্রবার সকালে বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পাঁচজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে রাতে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া (৩১) এনামুল হক (২৭), অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন (২৯) ও হারুনুর রশিদ (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ফাঁস করা প্রশ্নের সফট/হার্ডকপি, মোবাইল ফোন, নগদ দেড় লক্ষ টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত দলিল, হিসাব নিকাশের চারটি ডায়েরি, বিভিন্ন প্রার্থীর এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন বলেন, চক্রটি আগের রাতে প্রশ্নফাঁস করলে তার কপি ডিবির হাতে চলে আসে। তার প্রেক্ষিতে ডিবি অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সরাসরি প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করেছে। তারা প্রশ্ন দিয়ে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কারও কাছে ২ থেকে আবার কারও কাছে ৭ লাখ টাকাও নেয়। মূলত প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষার আগে মুখস্ত করার কাজটি তারা করেছিল। আমরা তাদের কাছ থেকে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পও উদ্ধার করেছি। যারা গরিব পরীক্ষার্থী তাদের বলেছিল, আমরা তোমাদের জন্য সব করব, এজন্য তোমাদের বাড়ি ভিটেমাটি বা জমি লিখে দিতে হবে। তাদের কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে তা লেখা আছে।

db-3গ্রেফতারকৃতরা এর আগেও এমন কাজ করেছে জানিয়ে ডিবির হারুন বলেন, আগেও তারা বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছে। বিমানের জিএমসহ অন্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি ছিল। সেই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করেছে সেজন্য তাদের রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে আরও কেউ আছে কিনা তা জানা হবে।

‘তবে দেখা দেখা গেছে যারা প্রশ্নফাঁসে গ্রেফতার হয়েছেন তারা বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে বিভিন্ন কাজে জড়িত। এর আগে তারা প্রশ্নফাঁস করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর সেই টাকা তারা কাকে কাকে দিয়েছে সেটাও জানার চেষ্টা করব। পরীক্ষার আগের রাতে এভাবে যদি টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস হয় তবে গরিব ও মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন। আমরা এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।’-বলে ডিবি প্রধান।

হারুন অর রশীদের ভাষ্যমতে, গ্রেফতারকৃতরা ছাড়াও শনাক্তকৃত আরও কয়েকজন নিয়োগ বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সঙ্গেই ছক কষতে থাকে কীভাবে প্রশ্নফাঁস করবে, কীভাবে তা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করবে, কোন চ্যানেলে টাকা সংগ্রহ করবে এবং কীভাবে তা বন্টন করবে ইত্যাদি বিষয়ে। প্রশ্ন প্রণয়ন, প্রিন্টিং এবং তা সংরক্ষণ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে থাকা জড়িতরা প্রশ্নের হুবহু কপি সংগ্রহ করে সরাসরি অথবা হোয়াটসঅ্যাপে দেয়।

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর