শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রাতে অঘোষিত লোডশেডিংয়ে ঘুমের ব্যাঘাত, কাজের ক্ষতি

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২৩ এএম

শেয়ার করুন:

রাতে অঘোষিত লোডশেডিংয়ে ঘুমের ব্যাঘাত, কাজের ক্ষতি

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশের লোডশেডিং। দিনের বেলা নির্ধারিত শিডিউল মেনে লোডশেডিং হলেও তোয়াক্কা করা হয় না রাতে। এতে তীব্র গরমে রাতে যেমন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি নিদ্রাহীন শরীরে দিনের বেলায় এর প্রভাব পড়ছে কর্মস্থলে। যদিও রাত ১২টার আগে বিদ্যুৎ চলে গেলে অনেকেই সময় কাটান মোবাইলে। তবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় শেষ রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া। 

এদিকে রাজধানীর অনেক এলাকায় দিনভর চলছে তীব্র গ্যাস সংকটও। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! দিনের গ্যাসের অভাবে চুলা না জ্বলায় রাতে রান্না করতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষকে। রান্না শেষে ক্লান্ত শরীরে যখন একটু ঘুমের প্রয়োজন তখনই উধাও বিদ্যুৎও। একদিকে যেমন লোডশেডিং অন্যদিকে গ্যাস সংকট, সবমিলে অতিষ্ঠ জনজীবন।

যদিও রাতে লোডিশেডিংয়ের কোনো শিডিউল দিচ্ছে না বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো। তার মধ্যে একটি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণকারী এই সংস্থার ওয়েবসাইটে নেই রাত ১২টার পর লোডশেডিংয়ের কোনো তথ্য। তবুও বিভিন্ন এলাকা থেকে রাত ১২টার পর ১ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের অভিযোগ— রাত ২-৩টায় যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ঠিক তখন চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। আসছে এক-দুই ঘণ্টা পর। এতে আর ঘুম হয় না রাতে। 

মিনহাজ। রাজধানীর জুরাইন এলাকার এই বাসিন্দা জানান, ‘সারাদিন কাজ শেষে রাতে যখন ঘুমাতে যাচ্ছি তখন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে তীব্র গরমে রাতে আর ঘুম হয় না। ফলে এর ব্যাঘাত পড়ছে অফিসের কাজে।’

এদিকে এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সালমা আক্তার নামে একজন লিখেছেন, ‘রাত ২টায় ঘুম ভাঙে, পাক্কা একঘণ্টা লোডশেডিং। তবে এখানেই শেষ নয়।  ভোর ৫টায় বিদ্যুৎ উধাও হয় আরেকবার। সুস্থ থাকতে গেলে সবার ৬ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। সকালে যাদের কর্মক্ষেত্রে ছুটতে হয় তাদের জন্য আরও জরুরি। দিনের লোডশেডিংয়ের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। 


বিজ্ঞাপন


এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাজমুল আলী লিখেছেন, ‘সামনে পরীক্ষা। দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই লোডশেডিং চলে। চোখের সমস্যার কারণে রাতে চার্জারের আলোয় পড়া যায় না। এর মধ্যে আছে প্রচণ্ড গরম। এর প্রভাব পরীক্ষায় পড়বে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। দেশের কর্তা ব্যক্তিরা কি এর দায় নেবে? তারা তো ২৪ ঘণ্টা তাদের সন্তানকে হাই ভোল্টেজ এসি রুমের ভেতরে রাখে। তারা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কষ্ট কীভাবে বুঝবে।’

এদিকে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি গ্যাস সংকট নিয়েও ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে। রাজধানীর ভূতের গলি এলাকার বাসিন্দা রুনা জানান, ‘লোডশেডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের কষ্ট আর কতদিন সহ্য করতে হবে? সকাল ৭টার পরে চায়ের পানিও গরম করা যায় না। ৭টায় যায় আর রাত ৮টায় আসে। গ্যাসের চাপ বাড়ে রাত ১০টায়। মানুষ অসহনীয় কষ্টে আছে।’ 

রাজধানীর আরেক ভুক্তোভোগীর অভিযোগ— ‘দুই চুলার একটা বার্নারের গ্যাস বিল ১ হাজার ৮০ টাকা নেয়। অথচ সকালে নাস্তা বা দুপুরের খাবার রান্না করার সময়ও গ্যাস থাকে না। এটা কি প্রতারণা নয়? আপনাকে প্রোডাক্ট দেবে বলে টাকা নিয়ে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তা না দেয়, তাকে কি প্রতারক বলবেন না?’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে এই সংকট আরও প্রকট। আগে ২৪ ঘণ্টার লোডশেডিং স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিল গ্রাম-গঞ্জের মানুষ। কিন্তু এখন ৮ থেকে ১২ ঘণ্টাও থাকছে না বিদ্যুৎ। এসব এলাকার মানুষকে অনেক ভুগতে হচ্ছে। 

নানা সমালোচনা আর অভিযোগের জবাবে বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন বৈশ্বিক সমস্যার কথা। তারা জানিয়েছেন, বৈশ্বির জ্বালানি সংকটের কারণে ভুক্তভোগী বাংলাদেশও। কবে নাগাদ এই সমস্যার অবসান ঘটবে তাও বলতে পারছে না কেউ। 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু এখন নভেম্বরের আগে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতির কোনো আশা দেখছেন না তিনি। 

গত ১০ অক্টোবর বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘গ্যাস আনতে না পারায় নভেম্বরের আগে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতির আশা নেই। আমরা দিনের বেলা কিছু পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রাখছি। আবার দিনে যেগুলো চালাচ্ছি সেগুলো রাতে বন্ধ রাখছি। এজন্য লোডশেডিংয়ের জায়গাটা একটু বড় হয়ে গেছে। আমরা চেয়েছিলাম অক্টোবর থেকে কোনো লোডশেডিংই থাকবে না। কিন্তু সেটা করতে পারিনি। কারণ গ্যাস আনতে পারিনি। সমস্যাটা সাময়িক হতে পারে। 

সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অক্টোবর মাসটা একটু কষ্ট করতে হবে। আশা করছি, সামনের মাস থেকে আরেকটু ভালো হবে।’

টিএই/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর