বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

লোডশেডিংয়ের ধাক্কা জেনারেটরে, ভাড়াটিয়াদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ১০:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

লোডশেডিংয়ের ধাক্কা জেনারেটরে, ভাড়াটিয়াদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

রাজধানীর সেগুনবাগিচার ইস্টার্ন মোর্শেদ টাওয়ারে নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন অ্যাডভোকেট আবু তালেব। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার সময় তাদের ভবনে জেনারেটর খুব একটা চালু করার প্রয়োজন হতো না। কখনও দিনে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট, কখনও দিনভর বন্ধ থাকত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর। কিন্তু গত ৪ অক্টোবর হঠাৎ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেওয়ার পর থেকে দিনে কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা চালু রাখতে হয় জেনারেটর।

ভবনটির একজন নিরাপত্তা কর্মী জানালেন, এক ঘণ্টা জেনারেটর চালালে পাঁচ লিটার তেল খরচ হয়। দৈনিক তিন ঘণ্টা চালালে কমপক্ষে ১৫ লিটার জ্বালানি লাগে। যার বাজারমূল্য দেড় হাজার টাকার বেশি। আপাতত ভবন ব্যবস্থাপনার খরচ থেকে জ্বালানির বাড়তি টাকা দেওয়া হলেও সামনে লোডশেডিং বাড়লে সার্ভিস চার্জও বাড়তে পারে।


বিজ্ঞাপন


সেগুনবাগিচার এই ভবনে যখন সার্ভিস চার্জ বাড়ার গুঞ্জন তখন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ডা. মাহফিল আরা রহমানকে চলতি মাস থেকেই দেড় হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে জেনারেটরের ওপর চাপ বেড়েছে। আমাদের ভবনের সব ফ্ল্যাটের ব্যবস্থাপনা ফি ১৫০০ টাকা বেড়েছে। আগে ৭ হাজার ছিল, এখন সাড়ে ৮ হাজার দিতে হবে।।’

Loadshadingগত আগস্টে দাম সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ২২ আগস্ট দাম কিছুটা কমানো হয়। সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, পেট্রল ১২৫ টাকা আর অকটেন লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।

এদিকে ঢাকার দুই এলাকায় দুই বাসিন্দাই নয়, জেনারেটরের জ্বালানি খরচ বাড়ায় বেশিরভাগ বাসায় সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর আলোচনা চলছে। ফলে ভাড়াটিয়াদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। অভিজাত এলাকা ছাড়াও রাজধানীর সুউচ্চ ভবন মালিকরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তা করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষদের মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা শীত আসার অপেক্ষায় সরকার। নির্দিষ্ট করে কোনো সময়সীমাও দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ফলে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির এই অবস্থা আরও লম্বা সময় টেনে নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই সরকারকে দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আর কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিত্তশালীদের সমস্যা কম হলেও বিদ্যুতের এই যন্ত্রণায় মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের বেশি ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে। এখন বাসা-বাড়ির সার্ভিস চার্জ বাড়ছে, কয়দিন পর বাসা ভাড়া বাড়বে। তাহলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে? সংশ্লিষ্টদের বলবো, কীভাবে বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের অস্থিরতা দূর করা যায় সেই ব্যবস্থা নিন।’

যখন থেকে সমস্যা শুরু

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে গত ১৯ জুলাই থেকে সারাদেশে শিডিউল করে প্রতিদিন এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ঘোষণা দেয় সরকার। তখন আশ্বস্ত করা হয়েছিল সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু পরের মাস অক্টোবরে এসে আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে লোডশেডিং। মাঝে হঠাৎ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় ঘটার পর থেকে শুরু হয়েছে অস্বাভাবিক লোডশেডিং। দিনে রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থেকে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ।

Load Shadingলোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা শুরুর দিকে বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে দিনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকলেও দিন দিন বাড়ছে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। সেখানে সোমবার দিনে উৎপাদন ছিল নয় হাজার ৮৯৬ মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যায় চাহিদা ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। আর গতকাল সন্ধ্যায় উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস ও তেলের আমদানি ও সরবরাহ কম থাকায় অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রিড বিপর্যয়ের পর কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় সচল করতে না পারার কারণেও বেড়েছে লোডশেডিং। ঢাকাতে তিন-চার ঘণ্টা এবং গ্রামে সাত-আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এমন পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও পিডিবির প্রস্তাব নাকচ করে দেয় জ্বালানি খাতের দাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

দেশের ১৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে গ্যাসচালিত ৫৭টি। পিডিবির সূত্র বলছে, তেল-গ্যাস মিলিয়ে বর্তমানে ৩৮টি কেন্দ্রই জ্বালানি সংকটে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। বেশ কিছু কেন্দ্রে চলছে আংশিক উৎপাদন।

কী বলছে মন্ত্রণালয়?

বিদ্যুতের এমন নাকাল পরিস্থিতি থেকে কবে উত্তরণ ঘটবে তা বলতে পারছেন না খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীও। সবশেষ গত ১১ অক্টোবর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘অক্টোবরের পর বিদ্যুতের কষ্ট কমবে। গরম কমে চাহিদা কমলে বিদ্যুৎ ম্যানেজ করতে পারবো।’ তিনি জনগণকে ধৈর্য ধরতেও আহ্বান জানিয়েছেন।

Powerএদিকে ভাড়াটিয়াদের নিয়ে কাজ করা ‘ভাড়াটিয়ার পরিষদের’ সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার ঢাকা মেইলকে বলেন, সবকিছুতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। বিদ্যুতের সমস্যার কারণে কোথাও বাড়ির সার্ভিস চার্জ বাড়ছে, এতে বাড়িওয়ালার কিন্তু সমস্যা কম হচ্ছে। ভাড়াটিয়াদের বহন করতে হবে। তাই সরকারকে বলবো, যেভাবে পারেন দ্রুত বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করুন।’

বিইউ/জেবি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর