মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দুই ‘ম’তে বিপর্যস্ত মোহাম্মদপুর

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১০:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

দুই ‘ম’তে বিপর্যস্ত মোহাম্মদপুর
প্রতীকী ছবি

দিনের আলো নিভে যেতেই রাজধানীর শ্যামলী পথচারী সেতুর নিচে দেখা যায় একঝাঁক নারী। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনেই তাদের অবস্থান। অপেক্ষা খদ্দেরের। পতিতা হিসেবে কাজ করা এসব নারী এখান থেকে খদ্দের সংগ্রহ করে নিয়ে যান পাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে। সেখানেই চলে অবৈধ যৌনকর্ম।

এই কাজে জড়িত আয়েশা নামের একজন ঢাকা মেইলকে জানান, প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন। খদ্দেরকে নিয়ে যান হোটেলে। এসব আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


শ্যামলীর আবাসিক হোটেলে মেয়ে ও কাস্টমার সরবরাহ করেন বেশ কয়েকজন 'দালাল'। পরিচয় গোপন রেখে ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ করেন একজন।

ওই দালালের ভাষ্যমতে, আবাসিক হোটেলে তাদের এই কার্যকলাপের ব্যাপারে সবারই জানা। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই তারা তাদের এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মেয়ে ও মাদক এই দুইয়ের আদ্যাক্ষর 'ম'। আর এই দুই 'ম'তেই বিপর্যস্ত গোটা মোহাম্মদপুর এলাকা।


বিজ্ঞাপন


অনুসন্ধান বলছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই রয়েছে অবৈধ পতিতালয়। এর মধ্যে কিছু জায়গায় একজন পতিতা, কোথাও একাধিক পতিতা রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণক হিসেবে কাজ করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা।

মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেডের ৬নং সড়কের পশ্চিম দিকে একটি পতিতালয় রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একাধিক পতিতার আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে এখানে।

মোহাম্মদপুর থানা এলাকার রায়েরবাজারে পতিতালয় পরিচালনা করেন স্বপন। নবীনগর হাউজিং এলাকায় রয়েছে আরেকটি অবৈধ পতিতালয়। নবীনগর ২নং সড়কের ওই পতিতালয় স্থানীয় প্রভাবশালী ‘ঘাড়ত্যাড়া’ মাসুমের নিয়ন্ত্রণে। মোহাম্মদপুরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নূরজাহান রোডে রয়েছে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ যৌন মিলনের সুযোগ।

মাদক বাণিজ্য রমরমা

২০১৯ সালের জেনেভা ক্যাম্পে র‍্যাবের অভিযানের পর অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল মোহাম্মদপুরের মাদক বাণিজ্য। তবে সময়ের সাথে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মাদক। মিলছে মোহাম্মদপুরের অলিতে গলিতে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এলাকার বাঁশবাড়ি বস্তিতে গাজা বিক্রি করেন কট্টির মা। বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও ছাড়া পেয়ে পুনরায় একই ব্যবসায় জড়াচ্ছেন তিনি।

বাঁশবাড়ি বস্তির বিপরীতে ওয়ার্কশপের গলিতে এক বস্তির বাসায় বসে গাঁজা বিক্রি করেন খোরশেদ। তবে তিনি খুইস্যা নামে পরিচিত।

হিরোইনের রমরমা বাণিজ্য চলে নবীনগর হাউজিংয়ের তিন নম্বর সড়কের পশ্চিম মাথায়। নবীনগর এক নম্বর সড়কের চন্দ্রিমা উদ্যান গেটে গাঁজা বিক্রেতা এক নারী।

সাত মসজিদ হাউজিং এলাকার গেইটে লেখা 'সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এলাকা'। অথচ এই এলাকার প্রধান গেইটের মুখেই বিক্রি হয় গাজা। এলাকার মধ্যে ৬ নম্বর সড়ক ও লাউতলা এলাকায় গাঁজা, ইয়াবা যেন উন্মুক্ত।

মোহাম্মদপুর কাদেরাবাদ এলাকার মকবুল কলেজের পাশের গলিতে দিনে দুপুরে পাওয়া যায় গাজা। মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেড তিন নম্বর সড়কের বেরিবাঁধের পাশে বসে গাঁজা বিক্রি করেন সুমন। লিমিটেড এক নম্বর সড়কে ইয়াবা বিক্রেতা সোহাগ।

মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি আট নম্বর সড়কে মাঝির বস্তিতে ইয়াবা বিক্রেতা গুলফা জুয়েল। নবীনগর ১৩ নম্বর সড়কে গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি করেন টেইল্যা রনি।

বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশে লোহার গেট থেকে শুরু করে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত গাঁজা, হেরোইন আর ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক একজন নারী। তার নাম রাশি। অবৈধ এসব মাদক বেচাকেনার সঙ্গে তিনি অনেক দিন ধরেই জড়িত। ক্রেতাদের জন্য মাদক কেনার পাশাপাশি সেখানে বসে মাদক গ্রহণের ব্যবস্থাও রেখেছেন এই রাশি।

নিজ নির্বাচনী এলাকার এই অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান ঢাকা মেইলকে বলেন, 'মাদক তো আছেই। সাথে কিশোর গ্যাংও আছে। পতিতালয় আছে কি না জানি না।'

সংসদ সদস্য হিসেবে আপনার পদক্ষেপ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার পদক্ষেপ কী হবে? আমাদের কি বাহিনী আছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জিজ্ঞেস করেন।'

44

এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তাদের নির্দেশ দেওয়া আছে। তাদের আরও স্ট্রিক হতে হবে।'

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, 'মোহাম্মদপুরে মাদক বেড়েছে কি কমেছে তার কোনো সমীক্ষা-রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই। তো কিসের ভিত্তিতে আমরা বলবো যে, মাদক বেড়েছে না কমেছে? কোথাও মাদকের সংবাদ থাকলে আমরা সেখানে অভিযান করি, আসামিদের গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করি।’

ওসি বলেন, 'এমন অনেক ঘটনা আছে যে গ্রেফতার করার পরে তারা জামিনে আসে এবং এসে আবারও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়ায়।’

মোহাম্মদপুরের পতিতাবৃত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'আমরা কিছুদিন আগেও দুইজন মেয়েকে গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করেছি। শ্যামলী ফুটওভারব্রিজের নিচে তারা এ ধরনের কাজ চালাত। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের সংশ্লিষ্ট বিটের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তদারকি করছেন এবং কাজ করছেন।'

এ ধরনের বিষয়ে তথ্য থাকলে পুলিশকে সহযোগিতা করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান ওসি।

ডব্লিউএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর