রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সেই মুরাদ হাসান এখন কোথায়?

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

সেই মুরাদ হাসান এখন কোথায়?

ঠিক এক বছর আগে দুর্গাপূজার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন ড. মুরাদ হাসান। তিনি সেসময় সরকারের তথ্যমন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তবে তার এই বক্তব্যের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেই ঝড় থামতে না থামতে গত বছরের ডিসেম্বরে আরও এক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। এভাবে একেরপর নানা বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার কারণে প্রতিমন্ত্রী পদ হারাতে হয়েছিল তাকে। এরপর দীর্ঘ দিন ধরে দেখা নেই ড. মুরাদ হাসানের।

ড. মুরাদ হাসান ১৯৯৪ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রলীগে আসেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে তিনি ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি হন। ২০০৩ সালে তিনি আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলা শাখার সদস্য, ২০১৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ২০১৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন।


বিজ্ঞাপন


মুরাদ ২০০৮ সালের নবম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। ২০১৯ সালের ১৯ মে থেকে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিএনপির রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগে আসা এই নেতাকে তেমন কোনো আলোচনা ছিল না। ২০২১ সালের অক্টোবরে দুর্গোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে মুরাদ হাসান বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি তার বক্তব্যে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ এবং ১৫তম সংশোধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল রাখার দাবি জানান।

তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বড় ধরণের ঝড় তোলে। সে ঝড় থামতে দীর্ঘ সময়ও লেগেছিল। সেই ঘটনা শেষ হতে না হতেই আবারও বিতর্কিত বক্তব্য দেন মুরাদ হাসান। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর রাতে এক ফেসবুক লাইভে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে তিনি কটূক্তি করেন।

সে বক্তব্য নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। তার ওই অশালীন বক্তব্য শুধু বিএনপি নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি পরিচিতি পান ‘টাকলা মুরাদ’ নামে।


বিজ্ঞাপন


এ ঘটনার পাঁচদিন পর জন্ম নেয় নতুন এক ঘটনার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয় একটি কল রেকর্ড। যেখানে মুরাদ হাসান নায়িকা মাহিয়া মাহিকে অশ্লীলভাবে কথা বলেন। ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন।

ওই কল রেকর্ডে প্রকাশ অযোগ্য অনেক কথোপকথনও ছিল। বিষয়টি দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় তোলে। সেই ঝড়েই প্রতিমন্ত্রীর পদ হারান ড. মুরাদ হাসান। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে হয় তাকে। একই সময় জামালপুর জেলার আওয়ামী লীগের কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
 
এরপর দেশ ত্যাগ করে কানাডায় চলে যান মুরাদ হাসান। তবে কানাডায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি তাকে। ফলে বাধ্য হয়ে আবারও দেশে ফেরেন সে বছরের ১২ ডিসেম্বর। দেশে ফেরারও এক মাসের কম সময়ে আবারও গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে ওঠেন মুরাদ হাসান। এবার তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী চিকিৎসক জাহানারা এহসান। নির্যাতন ও হত্যার হুমকি প্রদানের কারণ দেখিয়ে এ সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

এ ঘটনার পর থেকেই অনেকটা লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যান মুরাদ হাসান। তবে কিছুদিন ধরে আবারও দেখা মিলেছে তারা। প্রতিমন্ত্রীর পদ হারালেও সংসদ সদস্য পদে এখনো বহাল আছেন মুরাদ। তার নির্বাচনি এলাকা জামালপুর-৪ আসনের বিভিন্ন জায়গায় এখন নিয়মিত দেখা যায় তাকে। সেখানে সংসদ সংসদ হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, তদারকি করে সময় কাটছে তার।

সর্বোশেষ গত সোমবার নির্বাচনি এলাকার সাতপোয়া ইউনিয়নের ছাতারিয়া সুনারু বাড়ি ব্রীজ হতে চুনিয়াপটল চার নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সম্পূর্ণ নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন ও এলাকাবাসীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এর আগের দিন রিষাবাড়িতে আধুনিক বাস টার্মিনাল ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের শুভ উদ্বোধন করেন তিনি।

তবে এখন আর টেলিভিশন টকশো, ফেসবুক লাইভ কিংবা সমসাময়িক কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায় না সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে।

কারই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর