সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

মাসে প্রতি লাখে লাভ ১৫০০, ‘চিটার মনিরের’ ফাঁদে নিঃস্ব ১১শ পরিবার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

মাসে প্রতি লাখে লাভ ১৫০০, ‘চিটার মনিরের’ ফাঁদে নিঃস্ব ১১শ পরিবার

নৌ বাহিনীতে চাকরি শেষে পেনশনের ৬ লাখ, স্ত্রীর তিন লাখ আহমেদীয়া ফাইনান্স এন্ড কমার্স এমসিএস লি. জমা রেখেছিলেন আব্দুল হাকিম। পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনদেরও এই প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের চেয়ে বেশি লাভের আশায় টাকা জমা রাখেন তিনি। ২০১৯ সালে করোনার আগে সব মিলিয়ে তার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখা হয় ১৫ লাখ টাকা। শুরুর দিকে ঘোষণা অনুযায়ী এক লাখে ১৫শ টাকা করে লভ্যাংশ দিলেও কিছুদিন পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় লাভের টাকা। এরপর প্রতিষ্ঠান তালা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদ ওরফে চিটার মনির গ্রাহকদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যান।

তাই লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে এখন আসল টাকা উদ্ধারের জন্য পথে পথে ঘুরছেন আহমেদীয়া ফাইনান্স এন্ড কমার্স এমসিএস লি. এর প্রায় ১১শ গ্রাহক। পথে বসা গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান গ্রাহকরা।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গিয়াস উদ্দিন এমন দাবি করেন। এসময় প্রায় শতাধিক গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে শুরু করে এক কোটি টাকাও জামানত রেখেছেন অনেকে। ১১শর মতো গ্রাহকের তাকে কয়েকশ কোটি টাকা আটকে আছে মনির আহমদের এই প্রতিষ্ঠানে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান মো. মনির আহমেদসহ অন্যরা প্রতি লাখে ১৫শ টাকা করে মাসে লাভ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেয়। ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি টাকা লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় ২০১৯ সাল থেকে সবাই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। প্রথম দিকে লাখে ১৫শ টাকা করে লাভ দেওয়া হলেও কয়েকমাস পর টাকা দেওয়া কমিয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ২০২০ সালের দিকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

তারা জানান, অনেকে ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেনে টাকা রাখলেও পরে তারা জানতে পারেন এটি সমবায় অধিদফতর থেকে সমবায় কার‌্যক্রম পরিচালনার জন্য রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয়েছিল।  পরে তারা আসল টাকা উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও সমবায় অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


তাদের দাবি, এই প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখা টাকা সরিয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান করেছেন মনির আহমেদ। 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইব্রাহিমপুরের ৮২/২ হোল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় অবস্থিত আহমেদীয়া ফাইন্যান্স এন্ড কমার্স এমসিএস লি. অফিস। এখানে আমানত রাখা ১শর মতো গ্রাহকের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য, পুলিশ যেমন আছেন, তেমনি রিকশাচালক থেকে শুরু করে আরও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আছেন। সাবেক সরকারি চাকরিজীবীরা বেশিরভাগেই তাদের পেনশন ও গ্রাচুয়েটির টাকা দীর্ঘদিন ধরে এখানে এফডিআর করে রেখেছে। কিন্তু এখন লভ্যাংশ তো দূরে থাক আসল টাকা পাচ্ছেন না।

তারা জানান, গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত পেতে সহযোগিতা চেয়ে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। মন্ত্রী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করে ভুক্তভোগীরা বলেন, রিজেন্টের মতো বড় বড় দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী তাদের কষ্টে জমানো টাকাগুলো উদ্ধার করে মনির আহমেদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেবেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আহমেদীয়া ফাইনান্স এন্ড কমার্স এমসিএস লি. এর এমডি মনির আহমেদ ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। আর জিএম সাইফুল ইসলাম ফোন ধরলেও সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও ধরেননি।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর