সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভিক্টোরিয়া পার্কের ভেতরে খাবারের দোকান বসাচ্ছে সিটি করপোরেশন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

ভিক্টোরিয়া পার্কের ভেতরে খাবারের দোকান বসাচ্ছে সিটি করপোরেশন

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের ভেতরে খাবারের দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ব্যক্তি পর্যায়ের একজনকে পার্কের ঠিক মাঝখানে দোকান করার জন্য ইজারা দিয়েছে। নিয়মিত পার্কে হাঁটাচলা এবং স্থানীয়দের বিরোধিতার মধ্যেও এর নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। 

স্থানীয়রা বলছেন, পার্কের মধ্যে স্থায়ী দোকান নির্মাণ শুরুর পর থেকে তারা প্রতিবাদ করে আসছেন। আরো কর্মসূচি পালন করবেন। গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অব্যাহত আছে। প্রয়োজনে এর নির্মাণবন্ধে তারা আদালতে রিট করবেন।


বিজ্ঞাপন


ব্যস্ত রাজধানীর মাঝে একটুখানি সবুজের সমারোহ নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর শাহ পার্ক। ইতিহাসের সাক্ষী এই পার্কটিতে ব্যস্ত শহরে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলতে আশেপাশের অনেকেই নিয়মিত আসেন। অনেকে আবার সকাল- বিকাল-রাতের বেলা নিয়ম করে হাঁটতে বের হন।

এছাড়া বাহাদুর শাহ পার্ক (ভিক্টোরিয়া নামে বেশি পরিচিত) পুরান ঢাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে অবস্থিত। এটি ঢাকার সদরঘাট এলাকায় ঢুকেই লক্ষ্মীবাজারের ঠিক মাথায় অবস্থিত। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে সাতটি রাস্তার সমাহার।

চারপাশে রয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সেন্ট থমাস চার্চ ও ঢাকায় প্রথম পানি সরবরাহ করার জন্য তৈরি ট্যাংক। 

এছাড়া এর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তর পশ্চিম দিকে রয়েছে ঢাকার জজকোর্ট। আরো অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যমনি হয়ে অবস্থান করছে কালের সাক্ষী এই বাহাদুর শাহ পার্ক বা আন্টাঘর ময়দান। বর্তমানের এই বাহাদুর শাহ পার্ক বাংলার সংগ্রামী ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।


বিজ্ঞাপন


ফলে এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা হয়। এতে এমনিতেই পরিবেশ ভালো নেই। তারমধ্যে পার্কটির ঠিক মাঝখানে একটি রান্নাঘরসহ খাবারের দোকান হলে পরিবেশ আরও নষ্ট হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কায় এখানকার লোকজন বিরোধিতা করছেন বলে দাবি করেছেন।

এছাড়া ৮৫ কাঠারও বেশি আয়তনের পার্কটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও দিনে দিনে অনিরাপদ হয়ে উঠছে দর্শনার্থীদের জন্য। কারণ আগে লোহার গ্রিল দিয়ে পুরো পার্ক আটকানো থাকলেও এখন পুরোটা খোলা। এই সুযোগে পার্কে আসা মানুষদের প্রায়ই পড়তে হয় ছিনতাইকারীদের কবলে। শুধু তাই নয়, সংস্কারকাজ শেষ হওয়া এই পার্কে বেড়েছে নানাধরণের অপরাধ। অনেকটা অপরাধীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে এই পার্কটি। 

বর্তমানে আশপাশে ভ্রাম্যমাণ হকাররা খাবারের পসরা সাজিয়ে বসায় পার্কের চারপাশের সৌন্দর্য এমনিতেই নষ্ট হওয়ার পথে। নিয়মিত পার্কে আসা লোকজন বলছেন, স্থায়ীভাবে এখানে খাবারের দোকান হলে পার্কের সৌন্দর্য পুরোপুরি নষ্ট হবে।

তারা খাবারের দোকানের বদলে পার্ক থেকে স্থায়ীভাবে ‘ডেন্ডিখোর’দের উৎখাত ও পার্কের চারপাশে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকে দেওয়ার দাবি করছেন। 

এদিকে শুক্রবার সকালে পার্কের চারপাশে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাহাদুর শাহ (ভিক্টোরিয়া) পার্ক সংরক্ষণ পরিষদ।

ভিক্টোরিয়া পার্কের স্মৃতিসৌধটি চারটি পিলারের উপর দাঁড়ানো চারকোনা একটি কাঠামো। উপরে রয়েছে একটি ডোম। অপর পাশে রয়েছে একটি ওবেলিস্ক, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও ভারতবর্ষের সম্রাজ্ঞী হিসেবে রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহন মনে করিয়ে দেয়। ঠিক সেই স্তম্ভটির পাশেই করা হচ্ছে রান্নাঘর। এর সামনে হবে দোকান।

ঐতিহ্যবাহী পার্কটি ২০২০ সালে সাজানো হয় নতুন আঙ্গিকে। বিপুল অংকের টাকা খরচ করে সংস্কারের মাধ্যমে এর আধুনিকায়ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এখন সেখানে বসানো হচ্ছে স্থায়ী খাবার দোকান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার ইজারাদারের লোকজন লোহার অ্যাঙ্গেলসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী পার্কে নিয়ে আসার পরই লোকজন তাদের বাধা দেয়। তারমধ্যেও কিছু কাজ করে ফেলায় বুধবার সকালে যারা হাঁটতে আসেন তারা সবাই মিলে সব ভেঙে ফেলেন। পার্কে সকালে সবাই বিক্ষোভও করেন এমন স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে। 

পরে  বুধবার বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, যেখানে স্থাপনা হচ্ছে সেখানে বেশ কজন পুলিশ বসে আছেন। পাশে শ্রমিকরা কাজ করছেন। বৃহস্পতিবার সকালেও একইভাবে কাজ করতে দেখা গেছে। 

নির্মাণ শ্রমিকরা যেখানে রান্নাঘর হবে সেখানে লোহার স্থাপনা গড়ার কাজ মোটামুটি শেষ করেছেন। পরে খাবারের দোকান নির্মাণে হাত দেবেন। 

একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললেও কারা ইজারা পেয়েছেন সে নিয়ে তারা কিছু বলতে রাজি হননি। 

যেখানে কাজ করা হচ্ছে সেখানে অবশ্য দুটো ছোট ব্যানার টাঙানো দেখা গেছে। যাতে লেখা রয়েছে- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত ও ইজারাকৃত ফুডভ্যান নির্মাণের কাজ চলছে। 

যদিও একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজিব নামের একজন উত্তরার বাসিন্দা দোকানটির মালিক। 

এদিকে এমন ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে স্থায়ীভাবে খাবারের দোকান নির্মাণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে সমালোচনা করছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনকে ফোন করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বিইউ/এমএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর