মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কর্মকাণ্ড হুবহু ভোক্তা অধিকারের মতো, আসলে তারা ভুয়া!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

কর্মকাণ্ড হুবহু ভোক্তা অধিকারের মতো, আসলে তারা ভুয়া!

পণ্য কিনে প্রতারিত হলে প্রতিকার পাওয়ার জায়গা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। নিয়ম মেনে অভিযোগ করলে প্রতিকারও মেলে। আবার ভেজাল ও বাড়তি দামের পণ্য বিক্রি ঠেকাতে মাঠেও সক্রিয় এখানকার কর্মকর্তারা। কোথাও অনিয়ম পেলেই হয় জরিমানা। ফলে এদের নিয়ে কিছুটা হলেও তটস্থ থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ভোক্তা অধিকারের আদলে সংগঠন খুলে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে একটি চক্র। এমন অভিযোগ খোদ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের। এই চক্রের অপতৎপরতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

প্রতারণা প্রতিরোধে কাজ করার স্লোগান দিয়ে এই সংগঠনগুলো প্রথমে টার্গেট করা ব্যবসায়ীকে পাঠাচ্ছে লিগ্যাল নোটিশ। পরে অভিযোগের শুনানিতেও ডাকা হয়। কখনও আবার শুনানিতে না ডেকে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোট অংকের টাকা।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের আদলে একটি চক্র নামের মিল রেখে ‘বাংলাদেশ ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ভোক্তা অধিকার কমিশন’ নামে ভুয়া সংগঠন তৈরি করেছে। যারা এমন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে তথ্য মিলেছে। শুধু তাই নয়, তারা সারাদেশে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে নোটিশ পাঠিয়ে ও নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে রীতিমতো চাঁদাবাজি করছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে দেশজুড়ে সদস্যও বানানো হচ্ছে।

এই চক্রের কথা জানিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এসব সংগঠন টোটালি ভুয়া। সরকারি সংস্থার কাজের মাঝে এরা নাম দিয়ে অপব্যবহার শুরু করেছে। এদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’

Voktaএদিকে, এমন সংগঠন খুলে অনৈতিক কাজের অভিযোগ পেয়ে এদের তৎপরতা বন্ধে নড়েচড়ে বসেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এরই মধ্যে জাতীয় দৈনিকে এমন প্রতারণার ফাঁদে না পড়তে ভোক্তাদের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এমন কোনো সংগঠনের তৎপরতা নজরে এলে দ্রুত তাদের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকেও এমন প্রতারণার বিষয় জানানোর জন্য ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, যখন দেশব্যাপী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে মাঠে নেমে কাজ করা হচ্ছে, তখন একটি চক্র এই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। অনেক ভুক্তভোগী তাদের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগও করছেন। ফলে তারা সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার ফাউন্ডেশন’ নামে একটি পেজের খোঁজ মিলেছে। যার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে লায়ন নূর ইসলাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অন্য যে সংগঠনের কথা বলা হয়েছে তাদের কোনো ‘অস্তিত্ব’ পাওয়া যায়নি।

‘বাংলাদেশ ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার ফাউন্ডেশনে’র ফেসবুক পেজে দাবি করা হয়েছে, দেশে যখন ভোক্তা অধিকারের আইনের চিহ্নমাত্র ছিল না, তখন থেকেই তারা কাজ করছে। ২০০১ সাল থেকে কাজ করে এই সংগঠন এবং ভোক্তা অধিকারের যে আইন সেটি পাসের ব্যাপারে জোরাল ভূমিকা রাখে এই সংগঠন। আর সংগঠনের ঠিকানা হিসেবে ৭০, জি-সিরিজ ম্যানশন (ষষ্ঠ তলা), পুরানা পল্টনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে তাদের ফেসবুকে পেজে দেওয়া টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া মেলেনি।

অবশ্য এই সংগঠনেরও দাবি, একটি চক্র তাদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে উকিল নোটিশ দিচ্ছে, চাঁদা দাবি করছে। এই ঘটনায় পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। তাই এই সংগঠনের বিরুদ্ধে কোনোকিছু লিখলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

যদিও ভোক্তা অধিকারের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। এখনকার কর্মকর্তারা বলছেন, লিগ্যাল নোটিশগুলোতে যেসব ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের খোঁজ মেলেনি।

Voktaএ বিষয়ে ঢাকা মেইলকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আসল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নামের সঙ্গে মিল রেখে এরা সংগঠন খুলেছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন জানিয়েছে, তাদের এরা লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছে। পরে বিকাশে টাকা দাবি করেছে। একইভাবে সংগঠনের সঙ্গে কমিশন নাম দিয়েও একই কাজ করেছে। মজার বিষয় হলো- যাদের কাছে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে তার ওপরে সংগঠনের নাম আলাদা থাকলেও এদের ফরমেট একই। স্বাক্ষর, তারিখ সবই এক। তার মানে বোঝা যায় এরা একই চক্র।

এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এরা সারাদেশে জেলায় জেলায় কমিটি করে আবার আইডি কার্ডও বিতরণ করছে। সেখান থেকেও চাঁদা নিচ্ছে। এরা ব্যবসায়ীদের কাছে ফোন করে বলে- ভোক্তা থেকে বলছি। তখন অনেকে ভয় পেয়ে যান। এই সুযোগে এরা চাঁদা নেয়। এরা আসলে টোটালি ভুয়া সংগঠন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গোয়েন্দা সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এই দুই সংগঠনের বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের এই কর্ণধার বলেন, এ ধরনের বেসরকারি সংগঠন করার আইনগত ভিত্তি নেই। তারা কাজ করতে চাইলে তো আগে আমাদের কাছে আসবে। দ্বিতীয়ত, ফাউন্ডেশন কিংবা কমিশন গঠন করে কাউকে নোটিশ করে হাজির হয়ে বিচার করার এখতিয়ার বেসরকারি সংগঠনের নেই। এছাড়াও হুমকি দিয়ে টাকা সংগ্রহ করাও ফৌজদারি অপরাধ। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর