বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সমন্বয়হীনতায় অধরা পর্যটন খাতের সম্ভাবনা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৩৪ এএম

শেয়ার করুন:

সমন্বয়হীনতায় অধরা পর্যটন খাতের সম্ভাবনা
ফাইল ছবি

স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে দেশের প্রায় সব খাত কমবেশি উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পর্যটন খাতের অবস্থা এখনও নাজুক। বছরের পর বছর ধরে এখানে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। প্রচারের অভাব, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার ঘাটতি এবং পরিবেশ তৈরি করতে না পারায় এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না দেশের সম্ভাবনাময়ী এই শিল্প খাতকে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা নানা পরিকল্পনায় এগোচ্ছেন। বিদেশি পর্যটক আকর্ষণেও কাজ করছেন। কিন্তু সেই কাজ কতটুকু যথার্থভাবে হচ্ছে সেটা নিয়েও আছে প্রশ্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য যে সাতটি বিষয় থাকার প্রয়োজন এর সবগুলোই আছে বাংলাদেশের। এখানে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, মিঠাপানির টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো স্পট, যা সহজেই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণে সক্ষম। কিন্তু সেগুলো পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, পর্যটন করপোরেশন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা সময়ে দাবি করা হয়েছে, বিদেশিরা বাংলাদেশে এলে তাদের সেই পরিবেশ দেওয়া এবং তাদের চাহিদা মেটানোর পর্যাপ্ত উপকরণ নেই। ফলে তারা আসেন না। কিন্তু বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, করোনার আগে দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে বিদেশের লাখ লাখ পর্যটক এসেছে। বর্তমানে সেটাতেও ভাটা পড়েছে। গত তিন বছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ১০ হাজারও হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্যুরিজম বোর্ডের কাছে ২০১৯ সালে আসা বিদেশি পর্যটকের হিসাব ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই। তাদের মতে, ওই বছর তিন লাখের ওপর বিদেশি পর্যটক এসেছিল। তবে সেই বছরের পর থেকে আর কোনো হিসাব নেই তাদের কাছে।

ট্যুরিজম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পর্যটন খাতে নানা সমস্যা। প্রধান সমস্যা হলো প্রচার-প্রচারণার অভাব। দেশের বাইরে থাকা মিশনগুলোতে পর্যটনকেন্দ্রগুলো নিয়ে কোনো প্রচার করা হয় না। ফলে বিদেশি পর্যটকরা আকর্ষিত হয় না।


বিজ্ঞাপন


002

তারা আরও বলছেন, বিদেশি পর্যটকরা এদেশে ড্রিংকস করে ইনজয়ের জন্য আসেন না। তারা আসেন গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি কালচার ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য। আর দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে পর্যটন খাতে বিকশিত করতে হলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা সবার আগে প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন ট্যুর অপারেটরদের নিয়ে বসা ও সমন্বয় করা। কিন্তু সেটি করা হয় না।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গার্মেন্টস ব্যবসা ছাড়াও নানা প্রকল্পের কাজে বিদেশিরা আসেন। তাদের পরিসংখ্যান রয়েছে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে। সেই তথ্যকেই বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখ করে থাকে পর্যটন বোর্ড। কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনো ডাটা সার্ভার নেই। যা হিসাব দেওয়া হয় এর সবটাই অনুমাননির্ভর। যদিও কয়েক বছর ধরে ট্যুরিস্ট এজেন্সিগুলো থেকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্য বলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিজম বোর্ডের সিও আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের ঢাকা মেইলকে জানান, তারা ২০১৯ সাল পর্যন্ত হিসাব রেখেছেন। এরপর থেকে তাদের কাছে আর কোনো তথ্য নেই। তবে তারা বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য নানা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। সম্প্রতি ভারতের আগরতলা ও ইউরোপ থেকে একটি টিম আসে। তারা দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে বেড়ায়। তবে তিনি তাদের যে সংখ্যা উল্লেখ করেছেন, তা অত্যন্ত নগণ্য।

পর্যটন দিবসকে সামনে রেখে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বিদেশি পর্যটকদের যেসব চাহিদা তা আমরা পূরণ করতে পারি না। ফলে তারা আসে না। তবে তাদের আকর্ষণে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী আগামীতে কাজ করা হবে। 

বাংলাদেশ এক্সপ্লোরার ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর  ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রচার-প্রচারণার ঘাটতির কারণে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। বিদেশি মিশনগুলোতে কোনো প্রচারণা চালানো হয় না। ফলে আমরা সেই তুলনায় বিদেশি ট্যুরিস্ট পাচিছ না। আর এলেও তা যৎ সামান্য। তবে দেশীয় পর্যটক বেড়েছে। এখন তা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। ট্যুরিজম বোর্ডের হাতে ক্ষমতা তেমন নেই। তারা শুধু  প্রচার চালান। পুরো খাতকে নিয়ন্ত্রণ খুবই কম। ফলে পর্যটন খাত নিয়ে তারাও কাজ করতে পারছে না। তবে শুধু ট্যুরিজম বোর্ডের ওপর নির্ভর বাংলাদেশ পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এই খাত নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করলেই পরিবর্তন আসতে পারে।

011

তিনি মনে করেন, টার্গেট করে বিদেশের ২০টি দেশে পর্যটন খাত নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। এছাড়াও সেই সব দেশ থেকে বিদেশি পর্যটককে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এসবের পাশাপাশি চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বিদেশি পর্যটক প্রবেশে যেসব নিয়ম আছে সেগুলোও যেন শিথিল করা হয়। প্রান্তিক পর্যায়ের পর্যটন খাত বিকশিত করতে হলে এই খাতে সমবায়, যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কেও যুক্ত করা যেতে পারে।

ট্যুরিস্ট এজেন্সিগুলো জানিয়েছে, করোনার কারণে গত দুই বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যদিও এই খাতে প্রতি বছর আয়ের সম্ভাবনা ৮০ হাজার কোটি টাকা।

গ্রিন ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী ও এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারব। বিদেশিদের আকর্ষণের জন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখনও কাঁচামাল হিসেবেই আছে। সেগুলোকে পণ্যে রূপান্তর করা যায়নি। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি দুইভাবে অবকাঠামো দরকার। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, এই জায়গাগুলোতে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এছাড়াও যদি দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সাথে পর্যটন শিল্পের একটি সংযুক্তি ঘটানো যায় তবেই এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে।

এমআইকে/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর