শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পরিবেশ-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতায় সম্মত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

পরিবেশ-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতায় সম্মত

পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, আইসিটি, মহাকাশ প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সুনীল অর্থনীতিতে পারস্পরিক সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরদিন বুধবার ঢাকা-দিল্লী শীর্ষ বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে দেওয়া হয়। সেখানে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করা হয়।


বিজ্ঞাপন


যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও যোগাযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জনগণের মধ্যে সংযোগসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করেন। দুই নেতা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা করেছেন।

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত সোমবার ভারতে পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের পর কুশিয়ারার পানি বণ্টনসহ দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

পরদিন দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয় করোনা মহামারির প্রভাব ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কথা মাথায় রেখে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের চেতনায় আরও বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক রেল, সড়ক ও অন্যান্য যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।

HASINA-1উভয়পক্ষই টঙ্গী-আখাউড়া লাইনের ডুয়েলগেজে রূপান্তর, রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নত সেবার জন্য আইটি সহযোগিতার মতো চলমান দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।


বিজ্ঞাপন


দুই দেশের শীর্ষ নেতা কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নিউ গীতালদাহা সংযোগ, হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, ট্র্যাক ও সিগন্যালিং সিস্টেমের আপগ্রেডেশন এবং বেনাপোল-যশোর লাইন বরাবর রেলস্টেশন, বুড়িমারী ও চ্যাংরাবান্ধার মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপনের মতো নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

উভয়পক্ষই দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতার আওতায় বিভিন্ন ধরনের আর্থিক উপকরণের মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন খুঁজতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০টি ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভ অনুদান প্রদানের জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য ভারত বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত থেকে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের প্রত্যাশিত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

জবাবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতে বিদ্যমান সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করা হবে এবং এ বিষয়ে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হবে।

PM-4

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং প্রতিরক্ষার জন্য লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় প্রকল্পগুলো দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হন। তারা মনে করেন, এতে উভয় দেশ উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য যানবাহনের প্রাথমিক ক্রয় পরিকল্পনা চূড়ান্ত করাকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত এবং দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়াতে তারা আগ্রহ প্রকাশ করে।

ভারতের পক্ষ থেকে আরও বেশি সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য একটি উপকূলীয় রাডার সিস্টেম সরবরাহের জন্য ২০১৯ সালের সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে ভারত। বাস্তুচ্যুত এই মানুষদের নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদ, টেকসই ও দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়কেই সমর্থন করার জন্য ভারত অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্বের বিষয়ে শেখ হাসিনা তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সম্পাদনের জন্য দীর্ঘদিনের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেন। এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল ২০১১ সালে।

HASINA-2ভারতের পক্ষ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের জরুরি সেচের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ফেনী নদীর অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের অনুরোধ বিবেচনার কথা উল্লেখ করা হয়।

তথ্য আদান-প্রদানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ও অন্তর্বর্তীকালীন পানিবণ্টন চুক্তির কাঠামো প্রণয়নের জন্য আরও বেশি সংখ্যক নদী অন্তর্ভুক্ত করে সহযোগিতার ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করার জন্য যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের আন্তঃসীমান্ত অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে ভারত ও বাংলাদেশে পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক সইকে স্বাগত জানান, যা সিলেটে সেচের চাহিদা মেটাতে ও দক্ষিণ আসামের পানি প্রকল্পের সুবিধার্থে সহায়তা করবে।

দুই নেতা ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রাপ্ত পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য গবেষণা পরিচালনায় একটি যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি গঠনকে স্বাগত জানান।

চার দিনের সফরের তৃতীয় দিনে বিকেলে মুজিব স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ এবং যুদ্ধাহত ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের স্কলারশিপ দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরিব নওয়াজ দরগাহ শরিফ, আজমির (আজমির শরিফ দরগাহ) জিয়ারত করবেন।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর