মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নতুন আইজিপি হিসেবে আলোচনায় যারা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৫ এএম

শেয়ার করুন:

নতুন আইজিপি হিসেবে আলোচনায় যারা

বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজিপির মেয়াদ আগামী মাসেই শেষ হতে চলেছে। নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত আইজি পদে থাকা ব্যক্তি এই পদে বসতে পারবেন। কিন্তু এবার সেই অংক একটু ভিন্ন। কারণ এবার একই পদে ৩ জন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে আবার প্রশ্নও উঠেছে, বর্তমান আইজিপির মেয়াদ কী বাড়ছে। যদিও বিগত সময়গুলোতে কোনো আইজিপির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। মেয়াদ না বাড়ালেও অনেককে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন জায়গায় আবারও চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছিল। কিন্তু এই বর্তমান আইজির মেয়াদ বাড়ানো হলে তা হবে পুলিশের ইতিহাসে রেকর্ড।

এদিকে পুলিশের পরবর্তী প্রধান কে হচ্ছেন তা নিয়ে খোদ পুলিশ বিভাগে চলছে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন। বর্তমান ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই (৩০ সেপ্টেম্বর)। অন্যদিকে পুলিশের দুটি বিভাগের প্রধানের পদও খালি হতে চলেছে। আর এই দুই পদে প্রধান হওয়ার দৌড়ে অনেকেই আছেন। যদিও এরই মধ্যে সিআইডির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত আইজি আলী মিয়াকে। 


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, বিগত সময়গুলোতে অন্যান্য আইজির মেয়াদ চুক্তির ভিত্তিতে বাড়ানো হলেও বেনজীরের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না তা নিয়ে নানা হিসেব ও আলোচনা চলছে। পুলিশ বিভাগ এবং প্রশাসনে এখন এই নিয়ে জোরালো আলোচনাও হচ্ছে। আইজিপি হিসেবে কাউকে চাকরির মেয়াদ শেষে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়ার নজির নেই পুলিশের ইতিহাসে।

সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির নতুন প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়াকে। তিনি ইতোমধ্যে দায়িত্ব নিয়েছেন।

যারা পুলিশের ৩১তম আইজিপি হওয়ার দৌড়ে আছেন। তাদের তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। তবে যাদের তালিকা তৈরি চলছে তাদের চাকরি জীবনের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক পরিচয়, পরিবার কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত এসব তথ্য সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া চারিত্রিক মাধুর্য ও আচরণের বিষয়টিও প্রধান্য পাবে।

বর্তমান আইজিপির মেয়াদ চুক্তিতে বাড়ানো না হলে কে হবেন পুলিশের পরবর্তী আইজি তা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। তবে বর্তমান আইজির মেয়াদ বাড়ানো হলে পুলিশের বিসিএস ৮ ব্যাচ ও ১২ ব্যাচ থেকে আইজি হিসেবে যাদের বিবেচনায় রাখা হয়েছে তাদের অনেকেই পরে আর ওই পদে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না।


বিজ্ঞাপন


গুঞ্জন উঠেছে, এবার আইজিপি হওয়ার দৌড়ে আছেন পুলিশের ৮, ১২ এবং ১৫ ব্যাচের ৩ কর্মকর্তা। বর্তমান আইজিপি ৭ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ছাড়া তার ব্যাচের সকলে অবসরে চলে গেছেন। ৮ম ব্যাচেরও চিত্র একই। সেই ব্যাচের মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এখন ডিএমপিতে কমিশনার হিসেবে দ্বিতীয় দফায় চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনিও অবসরে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তার ব্যাচমেট র‌্যাবের ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আইজিপি হওয়ার সুযোগ থাকলেও তার চাকরির মেয়াদকাল মাত্র সামনের জানুয়ারি পর্যন্ত। এসব বিষয় বিবেচনা করে বর্তমান আইজিপিকেই সময় বাড়িয়ে আবারও দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

পুলিশ সদর দফতরের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের রিক্রুটমেন্টের বিধি অনুযায়ী আইজির মেয়াদ শেষ হলে অতিরিক্ত আইজি থেকে পরবর্তী আইজি হওয়ার বিধান রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় সরকারের প্রতি আস্থশীল ব্যক্তিকেই বেছে নেওয়া হয়।

যাদের নাম আলোচনায় 
বাংলাদেশ পুলিশের ৩১তম আইজি হিসেবে র‌্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আলোচনায় আছেন। ১২তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) এস এম রুহুল আমিন পুলিশপ্রধান হওয়ার আলোচনায় থাকলেও বুধবার (৩১ আগস্ট) তাকে এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছে সরকার।

আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে- হাইওয়ে পুলিশের প্রধান মল্লিক ফখরুল ইসলাম ও পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির প্রধান বিসিএস ১৫ ব্যাচের মেধা তালিকায় ১ নম্বরে থাকা মনিরুল ইসলামের নামও আসছে।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন এবং একমাত্র পরীক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে আবারও বর্তমান আইজিপিকেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। যদিও এরই মধ্যে মানবাধিকার ইস্যুতে তিনিসহ র‌্যাব-পুলিশের ৫ কর্মকর্তার নামে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সাথে নিয়ে তার বিরুদ্ধে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে এনেছে। ফলে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এটা স্পষ্ট যে বেনজির আহমেদকেই আবারও আইজিপি চায় সরকার। তাছাড়া বিগত সময়গুলোতে থাকা আইজিপিদের তুলনায় মেধা, মনন ও সকল যোগ্যতায় বেনজির অতুলনীয় বলে মনে করে সরকার থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা।

igp

২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. বেনজীর আহমেদ। আইজিপি হওয়ার আগে তিনি র‍্যাব মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

আইজিপি’র দায়িত্ব পাওয়ার পরই ড. বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনেন। পুলিশের পদোন্নতি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রহণের মতো সিদ্ধান্ত নেন। হ্যান্ডস ফ্রি পুলিশিং চালু করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জন্য ট্যাকটিক্যাল বেল্ট চালু করেন। নারীদের সাইবার বুলিংয়ের মতো নির্যাতন বন্ধে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে সেবার প্রবর্তন করেন।

পুলিশপ্রধান হিসেবে বেনজীর আহমেদের উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে- টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নতুন ইউনিট চালু, ভাসানচরে নতুন পুলিশ স্টেশন নির্মাণ, করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দিতে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আধুনিকায়ন এবং ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে তা এক হাজার শয্যায় উন্নীতকরণ।

২০১৮ সালে র‍্যাবের মহাপরিচালক থাকাবস্থায় দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে প্রশংসিত হন ড. বেনজীর আহমেদ। গুলশান হামলা, শাপলা চত্বর ঘেরাওয়ের মতো সংবেদনশীল মুহূর্তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সরকারের ‘গুড বুকে’ নাম লেখান তিনি।

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর