শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সন্ত্রাস-নৃশংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ০৩:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

সন্ত্রাস-নৃশংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। বিএনপি শাসন আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে নজির বিহীন ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এর মাধ্যমে হিংসার দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতা। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ হামলার ঘটনাকে নৃশংস বলে আখ্যায়িত করছেন সরকারের সমালোচকরা।  

তারা বলছেন, রাজনীতিতে সংঘাত এখন খুব কমন বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিএনপি সরকার আমলে যেমন এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, তেমনি এই সরকারের আমলেও ঘটে চলেছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রাজনীতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা। 

এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা মেইলকে বলেন, সেদিন তো আমি নিজেও সেই মাঠে ছিলাম ও আহত হয়েছিলাম। আমার একটা চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। চোখে স্প্লিন্টার লেগেছিল। অপারেশন করতে হয়েছিল। প্রায় আড়াই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। এখন দল করি না, তাই দল আমাদের নাম মুখেও নেয় না। সেই সময় সময় শেখ হাসিনা আমার কথা খুব বলতেন। আমার খোঁজখবর নিতেন। তিনি আরও বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনা এটি খুবই একটা নিন্দনিয় ঘটনা ছিল। আমি এখনো এ ঘটনার নিন্দা জানাই। আসলে রাজনীতিতে ভিন্ন মত দমন করার জন্য যে একটা অপপ্রয়াস, এটা গুন্ডামি করা। আমরা সবসময় এগুলোর বিপক্ষে। সংঘাতের রাজনীতি তো এখনও চলছে। কখনো দলে দলে হচ্ছে। কখনো হয়তো প্রশাসনকে ব্যবহার করে করা হচ্ছে। সেদিন ভোলাতে যে একটা ঘটনা ঘটলো এটাও তো একটা সহিংস ঘটনা। সেদিন দুইজন মারা গেল কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই আছে।

আরো পড়ুন: প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় রক্তাক্ত ২১ আগস্ট 

সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা তো ইতিহাসে খুব জঘন্য ও নৃশংস একটি ঘটনা। এর বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি যেটাও কাঙ্খিত নয়। এই ঘটনায় বিএনিপি যে সুষ্ঠু তদন্ত করেনি বা বিচার করল না। নিঃসন্দেহে তারা দায় এরাতে পারে না। আমি মনে করি এর সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। যেসব সরকারি কর্মকর্তা এই ঘটনার  তদন্ত করেছে, যারা ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের সকলকেই চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এই ধরনের শঙ্কা বা ঘটনা তখনই বন্ধ হবে যদি প্রকৃত দোষিদের শস্তি দেওয়া হয়, এবং আমাদের রাজনীতিবীদদের মন মানসিকতা যদি পরবির্তন হয়।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ঢাকা মেইলকে বলেন, এটাতো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় হত্যাকাণ্ডের প্রচেষ্টা ছিল। যা রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল। এবং এই ঘটনার শুধু নিন্দা করলেই ক্ষান্ত হওয়া যায় না। এর পূণরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন থাকা দরকার। কারণ এই ধরনের ঘটনা গণতন্ত্র ধ্বংসকারী ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়। এর সাথে আমি দুটো বিষয় যুক্ত করতে চাই, একটা তো দলকে নিশ্চিহ্ন করা প্রচেষ্টা ছিল, তারপরে আরও দুটি বড় ঘটনা ঘটে। একটা হচ্ছে জজ মিয়া নাটক, যা ছিল রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায়। আরেকটা হলো যাদেরকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো, জনৈক বিচারপতিকে দিয়ে, সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টও ছিল সাজানো প্রতিবেদন। সুতরাং রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে কিভাবে ষড়যন্ত্র করা যায়, সেটি ২১ আগস্টের ঘটনা পরিষ্কার দেখিয়ে দেয়। এ ধরনের ঘটনা আর যেন পূণরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য এ ঘটনায় জড়িত সবার বিচারও হওয়া জরুরি। 


বিজ্ঞাপন


রাজনীতিতে সহিংসতা কখনো কাম্য নয় বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ডক্টর রেজা কিবরিয়া, তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা কখনো কাম্য নয়। আমরা সকল ভায়োলেন্সের বিপক্ষে। সকল সহিংসতার বিপক্ষে। সংঘাতের বিপক্ষে। এ ধরনের সংঘাতের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় অবস্থান নিয়ে থাকি। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে যেন মামলা হয় সেটাও আমরা বলে থাকি। যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি দোষি না হয়। 

তিনি আরও বলেন, ২১ আগস্টের মতো বড় ধরনের ঘটনা হয়তো এখন ঘটছে না। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যা গুম এখনো অব্যাহত আছে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি নৃশংস ঘটনা। তবে আমি মনে করি না এ ঘটনায় খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান জড়িত ছিল। আমি মনে করি এই ঘটনা বিএনপির আমলের একটি বড় ব্যর্থতা। বিশেষ করে জজ মিয়া নাটক, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এই কাজগুলো তারা ভুল কাজ করেছিল। এটা খালেদা জিয়ার শাসনামলের একটি বড় কলঙ্ক বলে আমি মনে করি। তার উচিৎ ছিল বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা। 

টিএই/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর