বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নীরবেই বাড়ছে বাসা ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২২, ১১:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

নীরবেই বাড়ছে বাসা ভাড়া

‘পাগলা ঘোড়ার’ পিঠে চেপে যখন নিত্যপণ্যের দাম ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখে ছুটছে, তখন রীতিমতো দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা সাধারণ মানুষের। ঠিক এই সময়েই রাজধানীর বাসা ভাড়াও বাড়ছে নীরবেই। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই রাজধানী ছাড়েন। ওই সময়ে ঢাকার বাড়িওয়ালারা কিছুটা বাসা ভাড়া কমিয়েছিলেন। তবে দুই বছর যেতে না যেতেই সেই ভাড়া উশুল করতে রীতিমতো তৎপর বাড়িওয়ালারা। এতে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার এই সময়ে নতুন করে বাসা ভাড়া বৃদ্ধি যেন ‘গলার কাটা’ হয়ে উঠেছে ভাড়াটিয়াদের।

রাজধানীর মুগদা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস আহসান হাবিবের। এক বছর আগে ১৪ হাজার টাকায় তিন রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়েছিলেন। বছর যেত না যেতেই দুই হাজার টাকা ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দেন বাড়িওয়ালা। এক ধাক্কায় দুই হাজার টাকা বাড়ানোয় বেশ বিপাকে পড়তে হয় তাকে।


বিজ্ঞাপন


শুধু আহসান হাবিবই নয়, মুগদা এলাকার অনেক ভাড়াটিয়াই জানিয়েছেন বাসা ভাড়া বাড়ানোর কথা। ফলে রীতিমতো বাসা ভাড়া বৃদ্ধির আতঙ্ক বিরাজ করছে ঢাকার ভাড়াটিয়াদের মধ্যে।

ভাড়াটিয়াদের ভাষ্য- জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাসা ভাড়া তো বাড়বেই, পাশাপাশি সব খরচ বৃদ্ধি পাবে। এতে ব্যয়বহুল এই শহরে টিকে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বাসা ভাড়া বাড়ালে সেই রাগে যে বাসা পরিবর্তন করব- সেটাও করা যায় না। কারণ, বাসা পরিবর্তন করতে কমপক্ষে অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ করতে হবে। এছাড়া নতুন বাসায় কমপক্ষে এক মাসের অগ্রিম ভাড়া দিতে হবে। এত খরচ বহন করা কঠিন, তাই বাসা মালিকদের চাপিয়ে দেওয়া ভাড়া বৃদ্ধির বাড়তি চিন্তা নিয়েই থাকতে হচ্ছে।

ঢাকা শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। নির্দিষ্ট বাসভূমি না থাকায় বিড়ম্বনাই তাদের নিত্য সঙ্গী। বছর ঘুরলেই ভাড়া বাড়ে, সেই সঙ্গে বাসা বদলের তাড়াও বাড়ে ভাড়াটিয়াদের। ফলে সাধ্যের মধ্যে মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজতে বছরের পর বছর ঠিকানা বদলাতে হয়। বাসা বদলের যন্ত্রণা ও খরচ তাই ভাড়াটিয়াদের জন্য নতুন চিন্তার বিষয়।


বিজ্ঞাপন


Rentনিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য ইট-পাথরের এই শহরে আশ্রয় খোঁজা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চবিত্তের জন্য সুরম্য অট্টালিকা ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাট যতটা তৈরি হচ্ছে, বাকি দুই শ্রেণির জন্য ততটা হয় না। ফলে উচ্চমূল্যের বহু ফ্ল্যাট রাজধানীতে এখন ফাঁকা পড়ে থাকলেও সংকট রয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের থাকার জায়গার।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ।

সংগঠনটির অন্য এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ ও ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাসা ভাড়া পরিশোধে। এই অবস্থায় জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। ফলে বাড়তি দামের প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে ভাড়াটিয়া পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সবকিছুর দাম যখন ঊর্ধ্বগতি তখন বাসা ভাড়া বৃদ্ধির একটা শঙ্কা তো আছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে মানুষ এমনিতেই বিপদের মধ্যে আছে। এই মুহূর্তে যদি বাড়িওয়ালারা বাসা ভাড়া বাড়ানোর তৎপরতা চালায়, তবে ভাড়াটিয়াদের জন্য তা আরও কঠিন হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সবকিছুর দাম বৃদ্ধির একটা রিউমার যখন আছে, তখন এই সুযোগে কিছু বাড়িওয়ালাও বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর তৎপরতা চালাচ্ছে। যেহেতু এটার কোনো নিয়ম নীতি নাই। যদিও একটা আইন আছে। এই আইন তো তেমন একটা প্রয়োগও হয় না। আর এই বাড়ি ভাড়া মনিটরিং করার জন্য তেমন কোনো সংস্থাও নাই। সে কারণে বাড়িওয়ালারা যে যেভাবে পারছে সুযোগ নিচ্ছে। এগুলা একটু নির্দিষ্ট রেগুলেশন বা জবাবদিহিতার মধ্যে না আনলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।’

টিএই/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর