বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

বৈধভাবে বিদেশ গিয়েও প্রতারণার শিকার ৫ যুবক, বিচার চেয়ে কাঁদলেন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৬:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

বৈধভাবে বিদেশ গিয়েও প্রতারণার শিকার ৫ যুবক, বিচার চেয়ে কাঁদলেন

ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের দিনমজুর মো. সোহেলকে কিরগিস্তান পাঠানোর কথা বলেন হাসান নামে এক দালাল। তার কথায় চিন্তাভাবনা না করে রাজি হয়ে যান গ্রামের সহজ সরল সোহেলের বাবা-মা। ধার দেনা, গহনা বিক্রি আর জমি বন্ধক রেখে দালালের চাহিদা মতো তিন লাখের মতো টাকা দিয়ে গত বছর সোহেলকে বিদেশে পাঠান। সোহেল ছাড়াও আরও ১৪ জন দালাল হাসানের প্ররোচণায় কিরগিস্তান পৌঁছান।

এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু দেশটিতে যাওয়ার পর সব কিছু বদলে যেতে থাকে। দুই-একদিন পর গার্মেন্টসের কাজে যুক্ত হলেও আশপাশের পরিবেশ তাদের মনে সন্দেহের জন্ম দেয়। কারণ কথা ছিল মাস শেষে বেতন হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫২ হাজার। থাকা-খাওয়া সব মালিক বহন করবে। কিন্তু মাস শেষ হতে যেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এই যুবকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কারণ তাদের বেতন দেওয়া হয় মাত্র ১০ হাজার টাকা। তার মধ্যে সাত হাজার টাকা ওই দেশের মালিক কেটে নিয়ে তাদের হাতে তিন হাজার টাকা তুলে দেয়।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন প্রতারণার শিকার পাঁচ যুবক। এ সময় সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। সরকার এবং প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন তারা। যে টাকা দালালরা নিয়েছে তা যেন ফেরত পান এবং যাদের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হলেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও চান এই যুবকরা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার শিকার বিপুল হোসেন জানান, তিনি বৈধভাবে দুবাই গেলেও সেখান থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে বাবার পাঠানো টাকায় দেশে ফিরে এসেছেন।

অন্য চারজন নিজেদের প্রতারণার কথা তুলে ধরে বলেন,  তারা সবাই দালাল হাসানের মাধ্যমে কিরগিস্তান গিয়েছিলেন। তারা হলেন- কিশোরগঞ্জের সজল মিয়া, নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার আমির হামজা, কুমিল্লা মুরাদনগরের মোহাম্মদ অলিউল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মেহেদী হাসান।

প্রতারণার শিকার বিদেশ ফেরতরা অভিযোগ করেন, বিদেশে থাকার সময়ও তারা যার মাধ্যমে গিয়েছেন সেই হাসানকে ফোন করলেও পাননি। দেশে আসার পর তাকে পাওয়া গেলেও যাতে এ নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি না করেন সেজন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।


বিজ্ঞাপন


প্রতারণার শিকার সোহেল মিয়া বলেন, আমি হাসান ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এখন সে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে যেখানে পাবে সেখানে মেরে ফেলবে। তাই ভয়ে বাড়ি যেতে পারি না। কিস্তির টাকা জন্য বাড়িতে লোকজন যাচ্ছে। বাড়ির লোকজনও শান্তিতে থাকতে পারতেছে না। স্ত্রী-সন্তান বিদেশ যাওয়ার সময় শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছি, এখনো তাদের বাড়িতে আনতে পারছি না। কারণ কী খাওয়াবো তাদের। এই ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই যুবক।

নিজের প্রতারণার শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে আমির হামজা বলেন, বাড়ি যেতে পারি না। ভয় দেখায় দালাল হাসান। বাবা থানায় গিয়েছিল মামলা করতে তখন পুলিশ বলেছে ছেলে দেশে নেই মামলা করবেন কীভাবে। এখন দেশে আসছি কিন্তু কিছু করে খাবো সেই সুযোগও নাই। কোনো আয় নেই। ছোট্ট বাচ্চার দুধ কেনারও টাকা নেই। এ কথা বলেই তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন পাশে থাকা অন্যরা তাকে সান্ত্বনা দেন।

পাঁচ যুবককে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা রাইটস যশোর নামে একটি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ঞ মল্লিক, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক ড. সি আর আবরার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

(রামরু) নির্বাহী পরিচালক ড. সি আর আবরার বলেন, যারা এইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা সবাই বৈধভাবে বিদেশে গিয়েছেন। তারা বৈধ পথে নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সিরর মাধ্যমে বিএমইটির দ্বারা সত্যায়িত স্মার্ট কার্ড নিয়ে বিদেশে গিয়েছেন। কিন্তু তারা যে প্রতারণার শিকার হলেন এর দায় কোনোভাবে সরকার, মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি এড়াতে পারে না। এরসঙ্গে দালালের পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সি, মিশনগুলোর কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সি আর আবরার বলেন, আজকে দেশের রিজার্ভ যখন টালমাটাল অবস্থায় তখন আমরা রেমিট্যান্সের ওপর ভরসা করছি। কিন্তু যদি বিদেশে যাওয়ার পরে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তাহলে প্রবাসীদের ওপর প্রভাব পড়বে। তাই অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়াদের নিয়ে দায়সারা বক্তব্য দিলেও বৈধভাবে যারা গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ এরা সবাই ঋণগ্রস্ত। পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা।

বিইউ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর