রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফেরানোর অগ্রগতি কত দূর?

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২২, ০৭:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফেরানোর অগ্রগতি কত দূর?

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায় রচিত হয়।

বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য জাতিকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ ২১ বছর। এরপর সব বাধা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ শেষে কিছু আসামির ফাঁসি কার্যকর করে। কিন্তু এখনো পলাতক আছেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েক আসামি।


বিজ্ঞাপন


বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে না আনায় হত্যার বিচারের পূর্ণতা পাওয়ার অপেক্ষা বিলম্ব হচ্ছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করতে চেষ্টা চালানোর কথা সংসার সংশ্লিষ্টদের মুখে শোনা গেলেও এখনো কোনো অগ্রগতি আসেনি।

দীর্ঘদিনের চেষ্টার পরেও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কেন ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, উদ্দ্যোগ অব্যাহত আছে। দীর্ঘ ৪৪/৪৫ বছর আগের ঘটনা। খুনিদের চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে কিছু কিছু দেশের সহযোগিতা কম পাচ্ছি।

আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে থাকি বা না থাকি খুনিদের খোঁজা অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করা হয়েছিল। এজন্য দেশের বাইরে গিয়ে তাদের লুকিয়া থাকাটা অনেক সহজ হয়েছে।

গত ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যায় পেছন থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছে তা উদঘাটন করা উচিত।


বিজ্ঞাপন


সেদিন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে সামনে থেকে যারা গুলি করেছে তারা স্বীকার করেছে যে আমরা খুন করেছি। প্রশ্ন হচ্ছে, শুধুমাত্র কি তারাই বলেছে? নাকি অনেক বড় চক্র এর পেছনে কাজ করেছে। যেটি এখনও উদঘাটন হয়নি।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমার কাছে মনে হয় বাংলা, বাংলার মাটি, বাংলার বাতাস, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাংলা ভাষা। সেজন্য বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে, বাংলা ভাষার কথা বলতে গেলে, বাংলার মানুষের কথা বলতে গেলে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি ১৯৭৫ সালে।

bangabandhufamily

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের বিচারে তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সরকার উদ্দ্যোগ নিলে অ্যাটর্নি অফিস সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, দুই আসামি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আছে। 

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আশা প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফেরত আনতেই হবে। তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি এসব আসামি আমেরিকা ও কানাডায় অবস্থান করছে। কিন্তু ওই সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। শুধু বাংলাদেশের নয়, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশেরও নেই। আমাদের দূতাবাস, মিনিস্ট্রি অব ফরেইন অ্যাফেয়ার্স চেষ্টা করছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচারের পথ খুলে যায়। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। 

এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি মন্থর হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামির মৃত্যুণ্ডের সাজা বহাল রাখেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যায় মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছিল ১২ জনের। এদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি ৫ খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

প্রায় ১০ বছর পর ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতক ছয়জনের একজন ৭২ বছর বয়সী আব্দুল মাজেদকে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

করোনাভাইরাস মহামারির সময় দেশে আসা মাজেদের আপিলের সুযোগ ছিল না। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তা নাকচ হলে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আরেক খুনি আজিজ পাশা।

বাকি পাঁচ খুনির মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় আর রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কানাডা মৃত্যুদণ্ডবিরোধী হওয়ায় নূরকে ফেরত দিচ্ছে না আর রাশেদকে ফিরিয়ে দিতে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে তাগাদা দিয়ে আসছে ঢাকা।

তবে বাকি তিন খুনি শরিফুল হক ডালিম ওরফে মেজর ডালিম, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আব্দুর রশীদ ও রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই। তবে ধারণা করা হয় মোসলেম উদ্দিন ভারতে আছেন। ডালিম ও রশীদ পাকিস্তানের পাসপোর্টধারী এবং কোটিপতি ব্যবসায়ী।

এআইএম/এমআর/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর