মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দক্ষিণ সিটির দুই পার্কের কাজ শেষ হবে কবে?

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৮:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

দক্ষিণ সিটির দুই পার্কের কাজ শেষ হবে কবে?

পার্ক আধুনিকায়নের দোহাই দিয়ে গড়িয়েছে তিন বছর। উন্নয়ন মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই। যদিও কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশের বেশি হয়নি। কবে শেষ হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। বলছি শাহবাগ শিশুপার্ক তথা শহীদ জিয়া শিশু পার্কে কথা। যেটির এখন নতুন নাম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নামে নামকরণ করা হয়েছে। 

এছাড়া কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কেরও একই অবস্থা। বাংলামোটর হয়ে রাস্তা ধরে হাঁটতে গেলেই ময়লার গন্ধে পথচারীদের নাকে হাত ধরে বা কাপড়ে নাক ঢেকে চলতে হয়। তাছাড়া গড়ে উঠেছে ভাসমান মানুষের বসতি। সন্ধ্যার পর দখলে যায় আইনবিরোধী লোকজন ও হিজড়াদের। ঘটছে ছিনতাই। হয়ে উঠেছে মাদকসেবীদের স্বর্গ।


বিজ্ঞাপন


সিটি করপোরেশন বলছে, দাফতরিক জটিলতা এবং বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পার্কের কাজ কিছুটা এগিয়েছে। তবে পান্থকুঞ্জ পার্কের কাজ শুরুই করতে পারেনি তারা। যদিও সংস্থাটির দাবি- অচিরেই শুরু হবে নির্মাণ কাজ। অন্যদিকে কাজ চলমান থাকা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পার্কের কাজ শেষ হতে আরও দুই বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।

কাজের অগ্রগতি নিয়ে যা বলছেন মেয়র
দুটি পার্কের চলমান জটিলটা এবং কাজের অগ্রগতি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের মুখোমুখী হয় ঢাকা মেইল। 

শাহবাগ শিশুপার্ক তথা শহীদ জিয়া শিশু পার্ক প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আমরা শিশুপার্কটির নামকরণ করব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জাতীয় শিশু পার্ক। পার্কটি নির্মাণের কাজ দীর্ঘসূত্রিতার পরে এগিয়ে যাচ্ছে। জটিলতা সমাধান হয়েছে। কাজও চলমান রয়েছে।

কি সেই দীর্ঘসূত্রিতা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, শিশুপার্ক প্রকল্পটি তিনটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পড়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ের সাথে ডিএসসিসি বারবার বসে সমাধান করার চেষ্টা করে। এখন সব কিছুই চূড়ান্ত। এ বছরে দরপত্রের কাজ শেষ করে এরপর সার্বিক কাজ শুরু করা যাবে বলে জানান তিনি। পার্কটির কাজ শেষ হতে আরও দুই বছর সময় লেগে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের কাজ শুরু না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মেয়র বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বা উড়াল সড়কের খুঁটি পার্কের দক্ষিণ দিকে বসাতে চেয়েছিল। যেখানে তারা ২০ ফুটের মতো জায়গা নিতে চেয়েছিল। এরই মধ্যে এ সমস্যার অবসান হয়েছে। আমরা জানিয়ে দিয়েছে- পার্কের অংশজুড়ে কোনো খুঁটি বসবে না। এখন আর এ নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। 

Panthkunj

কবে নাগাদ এ প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, যেহেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন আর জটিলতা নেই। আমাদের ইচ্ছে আছে এ বছরের মধ্যে কাজ শুরু করার। নতুন করে পার্কটি নিয়ে পরিকল্পনা করার। 

নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে মেয়র বলেন, শিশুপার্ক দুটির কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হবে। কারণ ঢাকা শহরে আমাদের সন্তানদের জন্য বিনোদনের তেমন জায়গা নেই। সেই সাথে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পার্কটি ঘিরে আধুনিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানে আধুনিক সব ব্যবস্থার পাশাপাশি নতুন ধরনের সব রাইডের ব্যবস্থা শিশুপার্কে রাখতে পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্কের অগ্রগতি যতদূর
শাহবাগে ১৫ একর জায়গার ওপর বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ জিয়া শিশুপার্ক। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক। এটি প্রথম সরকারি শিশুপার্ক। যা পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে শিশুদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আর মন্ত্রণালয়ের হয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশন বিভক্ত হলে দায়িত্ব পায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি। সিটি করপোরেশন পার্কটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও জায়গার মালিক গণপূর্ত অধিদফতর।

Shishu-Park

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেয়। শুরু হয় উন্নয়ন কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাটির নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ে করবে গণপূর্ত অধিদফতর। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশনর যান্ত্রিক বিভাগ সেখানে রাইড স্থাপন করবে। যদিও (৩য় পর্যায়) প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। 

এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। শিশুপার্কটির আধুনিক রাইড স্থাপন করবে সিটি করপোরেশন। এজন্য তাদেরকে দেওয়া হবে ৭৮ কোটি টাকা। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, পার্কটি আধুনিকায়নে এই পরিমাণ বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। শিশুপার্কের বিদ্যমান রাইডগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, নতুন রাইড বসাতে হবে। রাইড বসানো ও পার্কের উন্নয়নে এ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। দেড় বছর আগে শিশুপার্কের আধুনিকায়ন করতে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। যদিও প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন পায়নি।

Shishu-Park

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্কটির চারপাশে বেস্টুনিতে ঘিরে রাখা হয়েছে। ফটকে লেখা- ‘সাবধান পার্কের উন্নয়নের কাজ চলিতেছে।’ দুই-একটি ছাড়া অপসারণ করা হয়েছে আগের সকল রাইড। অপসারণের বাকি রাইডগুলো পড়ে রয়েছে অযত্নে। এখনও অপসারণ না করা জেট বিমান ঘিরে ঘড়ে উঠেছে ঝোপ। যেন মশার বংশবৃদ্ধির যথার্থ পরিবেশ। যদিও এ নিয়ে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের সাথে কথা বলতে চাইলেও রাজি হননি। 

পান্থকুঞ্জ শিশুপার্কের অগ্রগতি যতদূর
‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালে পান্থকুঞ্জ পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। জানা যায়, একই প্রকল্পের আওতায় আরও ৩০টি পার্ক সংস্কার শেষ হয়েছে বহু আগেই।

ডিএসসিসি সূত্র বলছে, পার্কটিকে ঢেলে সাজানোর মধ্যে রয়েছে চারপাশের দেয়াল না রাখা। পথচারীদের স্বস্তির জন্য চেয়ার বসানো, হাঁটার জন্য রাস্তা, খাবারের ক্যাফেটেরিয়া পড়ার পাঠাগার। সংস্কারে হাত দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। কারণ হিসেবে বলা হয়, পার্কের এক পাশে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের দুই থেকে তিনটি খুঁটি বসতে পারে। যদিও এর আগে পার্কে থাকা গাছ কেটে সাবাড় করা হয়। উন্নয়নের নামে দেওয়া হয় চারপাশে টিনের বেড়া। যা এখন নেই বললেই চলে।

panthokunjo

পার্কটির উন্নয়ন কাজ শুরুতে (২০১৮ সালে) ১৭ কোটি টাকা ধরা হয়। কাজের অগ্রগতি না হলেও পরবর্তী বাজেটে বাড়িয়ে করা হয় ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের বিল তুলেছে ৯০ লাখ টাকা।

সরেজমিনে পার্কে গিয়ে দেখা যায়- ঝুঁপড়ি হয়ে থাকা গাছ কাটা হয়েছে। যদিও প্লাস্টিকের এবং ময়লা কাপড়ের বেস্টনি দেওয়া ঝুঁপড়ি ঘরগুলো আবারও গড়ে উঠেছে। যেখানে মানুষের পদচারণার চিহ্ন স্পষ্ট। সিটি করপোরেশনের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার (এসটিএস) পেছনে কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

Panthkunj

মাঠের ঠিক মাঝে এবং উত্তর পাশে আরও দুটি টিনের ঘর। ঘরগুলো পার্ক সংস্কার করতে আসা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। এসময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হয়ে কথা বলতে আসেন মো. আব্বাস। তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে এখানে পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের ঠিকাদারি কোম্পানি ডিআর্সেনা ট্রেনিং করপোরেশন বেতন দিয়ে রেখেছেন। পার্কের বাংলামোটর অংশে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যা মাঠ পেরিয়ে ফুটপাতে এসে পড়েছে। কারওয়ান বাজার অংশে দেখা যায় পার্কের বিভিন্ন অংশে প্রস্রাব করা হয়। এছাড়াও পার্কের বিভিন্ন স্থানে কনক্রিটের ভাঙ্গা অংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

অদূরে থাকা সিটি করপোরেশনের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার–(এসটিএস) এবং পাবলিক টয়লেটের ময়লার পানিতে পার্কের একটি অংশ প্লাবিত হয়ে আছে। পানির অতিরিক্ত চাপ থাকায় পার্ক পেরিয়ে বাংলামোটর অংশে না যেতে পারে সে জন্য মাটি উঁচু করে দেওয়া হয়েছে। পার্কের বিভিন্ন অংশে বসে অনেকেই মাদক নিচ্ছেন। যাদের অধিকাংশ শিশু। সন্ধ্যার পর দেখা যায়, দখলে যায় পতিতা ও হিজড়াদের। যাদের কাছে অসহায় সাধারণ পথচারীরা।

ডিএইচডি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর