বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঈগল পরিবহনে সেই রাতে যা ঘটেছিল

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০২২, ০৮:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

ঈগল পরিবহনে সেই রাতে যা ঘটেছিল

নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল পরিবহনে দলবেঁধে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন একই বাসে থাকা যাত্রী হেকমত আলী।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা হলে পুরো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন হেকমত আলী ও তার স্ত্রী জেসমিন।


বিজ্ঞাপন


কুষ্টিয়ার প্রাগপুর থেকে ছেড়ে আসা নারায়নগঞ্জগামী ঈগল পরিবহনের ওই বাসে হেকমত আলী স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ শাশুড়িকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ঢাকায় যাওয়া জন্য স্ত্রী, দুই সন্তান এবং শাশুড়িকে নিয়ে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের ওই বাসে উঠি। এ সময় বাসে ১০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন।

পরে বাসটি ভেড়ামারা লালন শাহ সেতু পার হয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলের সামনে গিয়ে থামে। এরপর সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত পৌনে ১২টার দিকে আবার ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পর রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা চারজন বাসটিকে সিগনাল দেয়। একপর্যায়ে বাসটি থামলে সেখানে ওই চার যুবকের সঙ্গে কথা বলেন হেলপার। সে সময় দু-এক মিনিট কথা বলার পরই গাড়িতে উঠে পড়েন ওই চার যুবক। এরপর তারা বাসের পেছনের সিটে গিয়ে বসেন। এ সময় তাদের একজনের পিঠে একটি ব্যাগ ছিল।

আরও পড়ুন: বাসে ধর্ষণ: বার বার ছেড়ে দিতে আকুতি জানিয়েও রেহাই পাইনি

এর কিছুক্ষণ পর আরও পাঁচজন একইভাবে বাসটিতে উঠেন। তারপর উঠেন আরও দুইজন। তবে শেষ দুইজন ওঠার মিনিট দশেক পরেই হঠাৎই চালককে বাসটি থামাতে বলা হয়। তবে চালক থামাতে রাজি না হলে তাকে মারধর করেন ওই যুবকরা। একপর্যায়ে দ্রুত চালককে সরিয়ে তাদের একজন সেই আসনে বসে বাস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন।


বিজ্ঞাপন


হেকমত আলী জানান, সে সময় কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই দশজন বাসের প্রতিটি সিটের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন। এরপর পুরুষ যাত্রীদের গলায় ছুরি ও কাঁচি ধরে তাদের জিম্মি করে রাখেন। পরে তাদের কয়েকজন দ্রুত বাসের পর্দা কেটে পুরুষ যাত্রীদের মুখ, হাত ও পা বেঁধে ফেলেন এবং বাসের মাঝখানের লম্বা জায়গায় মাথা নিচু করে সবাইকে বসতে বাধ্য করেন। একই সময় বাসে থাকা ১০ থেকে ১২ জন নারী যাত্রীদের মধ্যে একজনের চোখ, মুখ ও হাত বেঁধে ফেলা হয়। তবে বাকিদের চোখ, মুখ ও হাত খোলা ছিল। একপর্যায়ে বাসের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে জানালার গ্লাসগুলো আটকে দেওয়া হয়। পরে ডাকাতরা প্রত্যেকের কাছে গিয়ে শরীর তল্লাশি করে টাকা, মোবাইলসহ নারী যাত্রীদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার লুটে নেয়।

আরও পড়ুন: চলন্ত বাসে ধর্ষণ: মূলহোতা রাজা ৫ দিনের রিমান্ডে

হেকমত আলীর স্ত্রী জেসমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, বাসের পেছনের দিক থেকে তিন সিট সামনে আমি বসা ছিলাম। ঘটনার সময় আমার হাত বেঁধে দেওয়া হয়। পরে আমার থেকে দুই সিট সামনেই থাকা এক নারীকে তল্লাশি করার সময় ওই নারী প্রতিবাদ জানান। এ সময় ওই নারীর সঙ্গে ডাকাতদের তর্ক বেধে যায়। একপর্যায়ে তারা ওই নারীকে মারধর করেন এবং শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পর ভয়ে আমি সঙ্গে থাকা এক সন্তানকে বুকে জড়িয়ে মাথা নিচু করে সৃষ্টিকর্তার নাম নিচ্ছিলেন। এ সময় সামনের আরেক সিটে আমার মা ছিলেন অপর সন্তানকে নিয়ে।

জেসমিন আরও বলেন, ডাকাত দল সব কাজ শেষ করার পর একে অপরকে ডাকাডাকি করেন। এ সময় তারা দলের সরদারকে ‘কাকা’ বলে ডাকছিলেন। আর মাঝে-মধ্যে নুরু, সাব্বির, রকি নামেও ডাকা হচ্ছিল একেকজনকে। সবশেষ রাত ৩টার দিকে বাসের মধ্যেই ডাকাতেরা লুট করা টাকা, মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেন। ওই সময় ভাগাভাগি নিয়েও বাসের ভেতরে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাস্তার পাশে গাড়িটি থামিয়ে দ্রুত তারা নেমে চলে যায়।

পরে ভোরের দিকে পুলিশে এসে সবাইকে উদ্ধার করে। এরপর কয়েকজনকে হাসপাতালে এবং তাদেরকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় থানা থেকে তাদের দুইজনের ছবি দেখানো হয়। ওই সময় বাসের যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিত করেন ওই দুজন বাসের মধ্যেই ছিল। পরবর্তীকালে রাত ৯টার দিকে আমাদের বিআরটিসির গাড়িতে টিকিট কেটে কুষ্টিয়ার গাড়িতে তুলে দেয় পুলিশ।

এইচই/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর