মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী উদ্যোগ বাস্তবায়নে কঠোর সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২২, ০৯:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী উদ্যোগ বাস্তবায়নে কঠোর সরকার
রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের অভিযান। ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে উৎপাদন খরচ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে আগেভাগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ছাড়াও বিদ্যুৎ খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নেওয়া উদ্যোগগুলো যেন বাস্তবায়ন হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের।

বিদ্যুৎ খরচ কমাতে রাত ৮টায় শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধের উদ্যোগ মাসখানেক আগেই নেওয়া হয়। মাঝে ঈদুল আজহার কারণে ১০ দিন এই বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়। আজ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে সেই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, রাত ৮টার পর দোকানপাট খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই কড়াকড়ি আরোপের কথা স্মরণ করিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিং মল খোলা থাকলে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মনিটর করা হবে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে। গতকাল সোমবার রাত থেকেই এই অভিযান শুরু করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।

প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, গতকাল বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ফকিরাপুলসহ বেশ কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালিত করে ডিপিডিসির টিম। তারা প্রথমে মাইকে লাইট বন্ধ করার অনুরোধ করেন। এরপরও যারা বন্ধ করেনি তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এই সতর্কবার্তা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। সবার প্রতি অনুরোধ আমাদের কাজে সহযোগিতা করুন।

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে আবারও আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার একনেকের সভায় মন্ত্রিসভার সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারের বাইরে সব নাগরিককে বিদ্যুৎ ব্যবহারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান।


বিজ্ঞাপন


প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশনা প্রতিনিয়তই দেন। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আগেও বলেছিলেন, গরমের সময় অফিসে কোর্ট-স্যুট না পরতে। এছাড়া সরকারি অফিসগুলোর এসি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় চালানোর জন্য বলেছিলেন। অপচয় না করতে প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই বলে আসছেন।’

এদিকে বৈদ্যুতিক বাতি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বন্ধ রেখে বৈঠক করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৩টায় এই বৈঠক শুরু হয়।

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পসমূহের বিপরীতে নেওয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা সম্পর্কে বৈঠকে আলোচনা হয়। এছাড়া ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান সম্পর্কিত তথ্য তালিকা আকারে কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ঋণের বিপরীতে ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধকল্পে প্রবিধান রাখার পরামর্শ দেয় স্থায়ী কমিটি। সরকারি স্থাপনাসমূহে জরুরি ভিত্তিতে এনার্জি অডিট করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করে স্থায়ী কমিটি।

bb1
লাইট-এসি বন্ধ রেখে সংসদীয় কমিটির বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঢাকায় মানা হলেও অন্য কোথাও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও তিন-চার ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না বলে অভিযোগ ওঠেছে।

লোডশেডিংয়ে পরিস্থিতি কতটা সামলানো যাবে?

এভাবে লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি কতটা সামলানো যাবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে হয়ত সাময়িক উপশম হবে, কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যেতে হবে৷

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিসেবে ফাঁকি আছে৷ পিক আওয়ারে যদি শপিংমলসহ দোকান পাট বন্ধ রাখা হয় তাহলে খুব সামান্যই লোডশেডিং হওয়ার কথা, এক ঘণ্টা নয়৷ বাস্তবে গ্রামে আগে থেকেই লোডশেডিং আছে৷ এখন এক ঘণ্টা নয় আরও বেড়েছে।’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী বলেন, ‘লোডশেডিং করে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে৷ কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা সমাধান নয়৷ আর সাশ্রয়ী মানে হলো বিদ্যুতের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমানো৷ এখন আমাদানি ব্যয় বেড়ে গেছে৷ টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেড়ে গেছে৷ তাই এটা করা ছাড়া সরকারের উপায় নেই৷ কিন্তু আমাদের যে গ্যাস আছে তা আসলে এখনও আমরা সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারিনি৷ গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন না বাড়ালে হবে না৷ কয়লাভিত্তিক উৎপাদনে যেতে হবে৷ এছাড়া সমাধানের কোনো উপায় নেই।’

বুয়েটের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘সরকারের এই লোডশেডিং করা ছাড়া এখন আরা কোনো উপায় নেই৷ আর বিশ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে এখানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে৷ কারণ যুদ্ধ মাথায় রেখে তো আর পরিকল্পনা করা যায় না৷ কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যুতের ব্যবহার আরও কমাতে হবে৷ এর আশু কোনো সমাধান দেখছি না।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর