কোনো আয় রোজগার ছিল না তাদের। বেকার হিসেবে এলাকায় ঘুরে ফিরে খেতেন। হঠাৎ দেড় বছরের মধ্যে তারা হয়ে যায় কোটিপতি। কিনেন ২ কোটি টাকার জমি ও প্রাইভেট কার। বলছিলাম তরিকুল ইসলাম বাবু (২৮) ও রানা হামিদের (২৬) কথা।
জানা গেছে, রানা অষ্টম শ্রেণি ও বাবু মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাদের নেশা ছিল দেশে ও ভারতে কোনো ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট চালু হলে তা নিয়ে বাজি ধরা। দেড় বছর আগে কোনো মাধ্যমে তারা অনলাইনে বাজি ধরে জুয়া খেলার সন্ধান পায়। পরে ব্যাটিং কিনে খেলতে শুরু করে। এক পর্যায় তারা জানতে পারেন, খেলার চেয়ে র্যাটিং ধরে খেলার এজেন্ট হলে এতে লাভ বেশি। এরপর শুরুতে এজেন্ট পরে হয়ে যান মাস্টার এজেন্ট। এটা হওয়ার পর থেকে আর পিছু তাকাতে হয়। মাত্র দেড় বছরে জুয়ার টাকায় কিনেছেন ২ কোটি টাকার জমি ও প্রাইভেট কার। আরও জমানো নগদ টাকাতো আছেই। শুধু তাই নয়, জুয়ার ২৫-৩০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
বিজ্ঞাপন
রানা ও বাবু মূলত ভারত, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পার্টির মাধ্যমে দেশে বসে লিংকের মাধ্যমে এসব অনলাইন জুয়ার আসর চালাতো। উত্তরায় বসে এসব কাজ চালালেও শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়ার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তারা এমন তথ্য দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ডিবি জানায়, তারা কারেন্সি কিনে ৬০ টাকা দিয়ে। আর তা বিক্রি করতো ১৫০ টাকায়। তারা এক সময়ে খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নিয়েছিল পরে মাস্টার এজেন্ট হিসেবে গত দেড় বছর ধরে এই ব্যবসা চালাচ্ছিল। তারা ২০ থেকে ২৫টি বিভিন্ন ব্যাংক বিকাশ রকেট এজেন্ট এবং ১০ থেকে ১২টি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা পাচার করেছে। তবে তাদের কাজে সহায়তা করত সুমন। এই সুমনের কাজ ছিল জুয়ার টাকাগুলো বিদেশে থাকা ব্যক্তিদের পাঠানো। এজন্য তারা বিকাশ, রকেট ছাড়াও ই-ব্যাংকিং সেবার সহায়তা নিতো।
ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, তারা তো রীতিমতো জুয়া চালিয়ে কোটিপতি বনে গেছে। উত্তরায় ৫ কাঠা জমি ও প্রাইভেট কার কিনেছে। বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু আমরা তাদের গ্রেফতার করে তাদের কোনো আয়ের উৎস পাইনি। তাদের সবার বাড়ি খিলক্ষেত এলাকায়। জমি ও গাড়ির বাহিরে তারা আরও অনেক কিছুই করেছে। সন্ধানে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ চক্রের আমরা তিন জনকে গ্রেফতার করেছি । এখনো ৫০ থেকে ৬০ পলাতক আছে। গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কি পরিমাণ গ্রাহক তাদের কাছ থেকে বিপিইউ কিনে গত দেড় বছরে অনলাইন জুয়া অংশ নিয়ে খেলেছে তা এখনো জানা যায়নি। তাদের ব্যাংক একাউন্টে কত টাকা রয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। তবে এই তিনজনের কোনো আয় নেই। এরপরও তারা এত টাকা কিভাবে পেল এই নিয়েই সন্দেহ জেগেছে। তারা এখনো এত টাকা লেনদেনের কোনো হিসেব দিতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
আরও জানা গেছে, এ দুজন ছাড়া আরও মাস্টার এজেন্ট রয়েছে। বাংলাদেশের অনলাইন জোয়ার মাস্টার এজেন্ট প্রায় শতাধিক বলে মনে করছে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, অনলাইন জুয়ায় যারা জড়িত পুরো চক্রটি লোকাল মাস্টার এজেন্ট ও সুপার এজেন্ড। তবে এরা সকলে লাভবান। আমরা তরিকুল, রানা ও সুমনকে গ্রেফতার করেছি। তারা এই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে গাড়ি-বাড়ি জমি করেছে। যারা এসব জুয়া পরিচালনা করছে তারা প্রচণ্ড লাভবান হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে যারা জুয়া খেলছে বা বাজি ধরেছে তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এমন কোনো লোক পাইনি যে বাজি ধরে গাড়ি ও বাড়ি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। যারা বাজি ধরছে তাদের কেউ কেউ ২/১টি তে জয়ী হলেও বাকি দশটাতে হেরে যান।
ডিবি বলছে, এই অনলাইন জুয়ায় র্যাটিংয়ের সিস্টেমটি হলো— যখন আইপিএল ও বিপিএল খেলাগুলো চলে তখন তারা বাজি ধরে। এক ওভারে কত রান হতে পারে কয়টি ছক্কা হতে পারে এ ধরনের তারা বাজি ধরে। ওয়ান ইস্টু থ্রি বি পিবিইউ এর একটি বাজি থাকে। তবে পুরো চক্রটিকে ধরার জন্য কাজ করছে ডিবি।
ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েববেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এডিসি আশরাফউল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, রানা ও বাবু জুয়া খেলেই জমি কিনেছে। এছাড়া তারা একটি প্রাইভেট কার নিয়েও ঘুরতো। তাদের গ্রেফতারের পর সেটি জব্দ করা হয়েছে। তাদের আরও কোনো সম্পদ ও ব্যাংক হিসেবে টাকা পয়সা আছে কিনা তা যাচাই চলছে।
গত রোববার রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় অনলাইনে জুয়া পরিচালনা করা মাস্টার এজেন্ট তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৮), রানা হামিদ (২৬) ও সুমন মিয়াকে (২৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৪টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ৫টি সিম কার্ড, ১৩টি ব্যাংক একাউন্ট ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট উদ্ধার করা হয়।
এমআইকে/এএস

