উৎসবের আলো যখন আকাশ রাঙাচ্ছিল, তখন অন্ধকার ডালপালায় লুকিয়ে থাকা ক্ষুদ্র প্রাণগুলোর জন্য নেমে এসেছিল এক বিভীষিকা। খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৬-কে বরণ করে নিতে আতশবাজি ও পটকার বিকট শব্দে শুধু মানুষ নয়, চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে নগরীর ঘুমন্ত পাখিরাও। গভীর রাতে হঠাৎ তীব্র শব্দ আর আলোর ঝলকানিতে আতঙ্কিত হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছে গাছে আশ্রয় নেওয়া অসংখ্য পাখি।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন উৎসবের আমেজ, তখন ভিন্ন এক চিত্র দেখা গেছে প্রকৃতির কোলে। শীতের রাতে গাছের ডালে নিশ্চুপে ঘুমিয়ে থাকা শালিক, চড়ুই, কাক ও ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি হঠাৎ শব্দে ভীত হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অনেক পাখিকে দিগ্বিদিক ওড়াউড়ি করতে দেখা গেছে, আবার কেউ কেউ আলোর তীব্রতায় বিভ্রান্ত হয়ে ভবনের দেয়াল কিংবা বৈদ্যুতিক তারে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাখিদের শ্রবণশক্তি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল। এই বিকট শব্দ তাদের স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। নগরীর পার্ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বর ও আবাসিক এলাকার বড় গাছগুলোতে বসবাস করা পাখিরা এই সময় হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দিশেহারা হয়ে উড়তে গিয়ে বাসা হারায় তারা, নষ্ট হয় পাখির ডিম, এমনকি শারীরিকভাবে গুরুতর ক্ষতির শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ঢাকায় বিকট শব্দে ফুটছে পটকা-আতশবাজি
পরিবেশকর্মীরা আক্ষেপ করে বলছেন, প্রতিবছর উৎসবের নামে এই আতশবাজি শহরের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে পরিযায়ী পাখিরাও এই আতঙ্কের শিকার হয়।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে রাষ্ট্রীয় শোক এবং নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সব ধরনের আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এই উৎসব পালন প্রাণিকুলের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা শহরের পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য এক বড় হুমকি।
আগুনের উৎসব শেষে যখন আকাশ শান্ত হয়েছে, তখন অনেক গাছের নিচেই হয়তো পড়ে ছিল কোনো নিথর ডানা; যারা কেবল চেয়েছিল একটু নিরাপদ আশ্রয়।
এএইচ

