পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে ডুবে গেছে ২০২৫ সালের শেষ সূর্য। বিদায় ঘণ্টা বেজেছে পুরনো বছরের, স্মৃতির পাতায় জমা পড়েছে সুখ-দুঃখের নানা অম্ল-মধুর মুহূর্ত। পেছনে পড়ে রইল সাক্ষী হয়ে থাকা বহু ভাঙা-গড়ার এক উত্তাল ও ঐতিহাসিক অধ্যায়। জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাংলাদেশের মানুষ আজ আরও একটি নতুন বছরে পা রাখছে; তবে এই পথচলা নিছক সময়ের আবর্তন নয়, বরং দু’চোখ ভরা এক বুক বড় স্বপ্নের হাতছানি।
শোকাতুর বিদায় ও জাতীয় হাহাকার
বিজ্ঞাপন
বছরের বিদায়বেলায় এক অভূতপূর্ব শোকাতুর পরিবেশ গ্রাস করেছে পুরো দেশকে। গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণে কেঁদেছে কোটি প্রাণ। এ দেশের মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধার যে আসনে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে বিদায়বেলার সেই অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায়। মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানিয়েছে গভীর মমতা আর পরম শ্রদ্ধায়।
একইসঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার ঘটনায় শোকের কালো মেঘ আরও ঘনীভূত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড স্তব্ধ করে দিয়েছে সেই তারুণ্যকে, যারা কোনো অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির ছায়ায় মাথানত করতে রাজি ছিল না। ২০২৫-এর এই বিসর্জনগুলো কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং জাতীয় সত্তার অবিচ্ছেদ্য ক্ষত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাগরণ ও আত্মত্যাগের মহাকাব্য
২০২৫ সালটি ছিল মূলত এক অদম্য প্রতিরোধের বছর। রূপান্তরের পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ হয় না; এই বিপ্লবও তার চরম মূল্য নিয়েছে। শূন্য হয়েছে বহু মায়ের কোল, প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে হাহাকার করছে অসংখ্য ঘর। শরীরের দৃশ্যমান ক্ষত আর মনের গহীনে জমে থাকা অদৃশ্য দাগগুলো আজ এক অপরাজেয় সাহসিকতার পদক।
বিজ্ঞাপন
তবুও এই শোকের দরিয়ায় ভাসতে ভাসতে জাতি আজ এক অমোঘ গর্বে বুক বাঁধছে। শহীদদের রক্ত আজ এক নতুন যুগের শিকড়ে প্রাণ সঞ্চার করেছে। ক্ষতবিক্ষত হয়েও বাংলাদেশ আজ এক মহাবিপ্লবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। পুরোনো ঘুণে ধরা ব্যবস্থার প্রতিটি ফাটল আজ হয়ে উঠেছে নতুন সৃষ্টির উর্বর ভূমি। যেখানে একসময় দুর্নীতির রাজত্ব ছিল, সেখানে আজ ন্যায়বিচারের চারা রোপিত হচ্ছে; যেখানে ছিল হতাশা, সেখানে ডানা মেলছে নতুন সুযোগ।
২০২৬: পুনর্জন্মের নতুন ভোর
২০২৬ সালের ভোরের প্রথম আলো যেন দীর্ঘ বিরহের পর এক পরম মমতাময়ী সন্ধি। এটি কেবল ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানো নয়, বরং একটি জাতির পুনর্জন্ম। যে রাজপথগুলো একসময় মিছিলে প্রকম্পিত হতো, সেখানে এখন পড়বে আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা ও কারিগরদের দৃঢ় পদক্ষেপ। বিশেষ করে তরুণ সমাজ, যারা ছিল এই গণজাগরণের হৃৎস্পন্দন, তারাই আজ আগামীর আধুনিক স্থাপত্যের মূল কারিগর হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
ফেলে আসা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব এক আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে। প্রতিটি নতুন সূর্য বাংলাদেশকে দেখাবে উন্নতির নতুন দিগন্ত, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করবে প্রতিটি মানুষকে। ২০২৬ সালের এই উদয় এক পবিত্র অঙ্গীকার—এ জাতি এখন আর শুধু কোনোমতে টিকে থাকাতে সন্তুষ্ট নয়; বরং আমরা এখন অদম্য সাহসে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর।
সামনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: নতুন প্রারম্ভের অপেক্ষা
একইসঙ্গে ২০২৬ সাল আমাদের সামনে এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণমূলক আর উৎসবমুখর এই নির্বাচনের মাধ্যমে সূচিত হতে যাচ্ছে এক নতুন প্রারম্ভ।
বাংলাদেশ আজ তার সোনালি ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রতিটি বিসর্জন আজ রূপ নিতে চলেছে ন্যায়বিচার, সাম্য আর সমৃদ্ধির ভিত্তিপ্রস্তরে। অন্ধকার কেটে আজ যে নতুন সূর্যের উদয় হয়েছে, তা এ দেশের মানুষের অদম্য প্রাণশক্তি আর আশার অবিনশ্বর শক্তিরই এক জীবন্ত দলিল।
এজেড

