দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কৃষিখাতে কার্বন ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিন দিনব্যাপী একটি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুরু হওয়া এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার (স্যাক)।
বিজ্ঞাপন
‘দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিখাতে কার্বন ট্রেডিং: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই প্রশিক্ষণে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নীতিনির্ধারক, গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। কর্মসূচিতে টেকসই কৃষি ও জলবায়ু কার্যক্রমে কার্বন বাজার কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের পরিচালক ড. মো. হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি দিন দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের সহায়তায় উদ্ভাবনী আর্থিক ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, সঠিকভাবে পরিকল্পিত হলে কার্বন ট্রেডিং জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি চর্চাকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি গ্রামীণ জীবিকাও উন্নত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সার্ক কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুস সালাম বলেন, কৃষিখাতে কার্বন হিসাব নির্ভুলভাবে নির্ধারণে শক্তিশালী গবেষণা ও তথ্যভিত্তিক সহায়তা অপরিহার্য। একই সঙ্গে তিনি কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্বন ট্রেডিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এ জন্য প্রমাণভিত্তিক নীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সার্ক সচিবালয়ের পরিচালক (এআরডি ও এসডিএফ) তানভীর আহমেদ তোরফদার বলেন, কার্বন ট্রেডিং কার্যকর করতে আঞ্চলিক পর্যায়ে নীতিগত সমন্বয় জরুরি। তিনি বলেন, অভিন্ন মানদণ্ড, জ্ঞান বিনিময় ও সক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া কৃষকদের জন্য কার্বন বাজারে প্রবেশ সহজ হবে না। সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সংলাপ তৈরিতে সার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের ভারাহা প্রতিষ্ঠানের লিড পার্টনারশিপ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অ্যালায়েন্স কৌশল বিস্ট। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিখাতে কার্বন ট্রেডিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তাঁর মতে, উন্নত মাটি ব্যবস্থাপনা, কৃষি-বনায়ন এবং কৃষিখাত থেকে মিথেন নিঃসরণ হ্রাসের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কার্বন ক্রেডিট অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির লক্ষ্য ও সার্বিক দিক তুলে ধরেন সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের সিনিয়র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) ও প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক ড. রাজা উল্লাহ খান। তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হলো কার্বন বাজার সম্পর্কে কারিগরি ধারণা তৈরি, কৃষিভিত্তিক কার্বন ক্রেডিটের সুযোগ চিহ্নিত করা এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা।
তিনি আরও বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষিখাত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী নয়, বরং কার্বন শোষণ ও নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে সমাধানের অংশ হিসেবেও কাজ করতে পারে।
এএইচ/এআর

