শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কুয়াশা ও শীতে আয় হারায় শ্রমজীবী মানুষ, বাড়ে দুশ্চিন্তা!

আব্দুল হাকিম
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কুয়াশা ও শীতে আয় হারায় শ্রমজীবী মানুষ, বাড়ে দুশ্চিন্তা!

ঢাকার মিরপুর ১০ এলাকায় থাকেন রিকশাচালক রহিম মিয়া। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রিকশা চালান। ভোর থেকে রাস্তায় নামলেও শীত শুরু হওয়ার পর আগের মতো আর ভাড়া জোটে না তার। কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডার কারণে সকালবেলায় যাত্রী চলাচল কমে গেছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেক সময় খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকে।

রহিম মিয়া জানান, আগে যেখানে দিনে ২০ থেকে ৩০টি ভাড়া পাওয়া যেত, এখন পাঁচ থেকে সাতটি পেলেই ভালো দিন মনে হয়। আয় কমে গেলেও সংসারের খরচ কমে না। ঘরভাড়া, খাবার আর পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে প্রতিদিনই সংগ্রাম করতে হচ্ছে। শীতের সঙ্গে শারীরিক সমস্যাও বাড়ছে। ঠান্ডায় দীর্ঘসময় রিকশা চালাতে গিয়ে সর্দি-কাশি ও শরীরব্যথা বেড়েছে। কিন্তু অসুস্থ হলেও বিশ্রামের সুযোগ নেই, কারণ কাজ না করলে আয় বন্ধ হয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন


1

শীত এলেই রাজধানীর হাজারো রিকশাচালকের জীবনযাত্রা এমনই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে সকালে অফিসগামী মানুষ দেরিতে বের হন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও উপস্থিতি কমে যায়। ফলে রাস্তায় রিকশার সংখ্যা বেশি থাকলেও যাত্রী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

শুধু রিকশাচালক নন, শীতের প্রভাব পড়ছে অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের ওপরও। দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, হকারসহ দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল অনেকে এই সময়ে কাজ ও আয়—দুটোই হারাচ্ছেন। ভোরের কুয়াশায় নির্মাণকাজ শুরু হতে দেরি হয়, আবার অনেক জায়গায় কাজ বন্ধও থাকে। এতে দিনমজুরদের আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

ফুটপাত ও বস্তি এলাকায় বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের জন্য শীত আরও কঠিন হয়ে ওঠে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই ঠান্ডা ঠেকাতে পুরোনো কাপড় বা পলিথিন ব্যবহার করেন। রাতে আগুন জ্বালিয়ে হাত-পা সেঁকে শীত পার করার চেষ্টা চললেও পুরোটা রাত ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না।


বিজ্ঞাপন


শীতের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে অসুস্থতার হারও বাড়ে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য থাকে না অনেকের। সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভিড় বাড়লেও কাজ ছেড়ে চিকিৎসা নিতে গেলে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকে চিকিৎসা নিতে দেরি করেন।

2

শ্রমজীবী ব্যক্তিরা জানান, শীতকালে আয় কমে গেলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে না; বরং অনেক সময় সবজিসহ দৈনন্দিন পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কেউ কেউ ধারদেনা করে দিন পার করছেন, আবার কেউ এনজিও বা পরিচিতজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

3

শীত মৌসুমে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুব সীমিত বলে মনে করেন শ্রমজীবীরা। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত উপকারভোগীরা সহায়তার খবরই পান না। আবার কেউ কেউ সংকোচ বা আত্মসম্মানের কারণে সাহায্য নিতে আগ্রহী হন না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালীন মৌসুমি সংকট মোকাবিলায় শ্রমজীবী মানুষের জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শীতকালে অস্থায়ী কর্মসংস্থান, নগদ সহায়তা এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ জোরদার করা গেলে এই মানুষগুলোর কষ্ট অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও শীত এলেই তারাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন।

এএইচ/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর