আগামী ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে র্যাব। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ চার্চ, উপাসনালয় এবং অনুষ্ঠানস্থলসমূহে আগত নারীদের উত্যক্ত/ইভটিজিং/যৌন হয়রানি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গির্জাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় সেখানে দায়িত্বরত র্যাব সদস্যদেরকে গির্জা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাসেবক টিম সর্বদা সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করছে।
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ গির্জাগুলোর নিরাপত্তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য চার্চ কর্তৃপক্ষ যেসব সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে তা যথাযথভাবে মনিটরিং করার জন্য চার্চ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে র্যাব।
এছাড়াও বড়দিনের উৎসবকে কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা এবং ভিআইপি কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানস্থলে গমনাগমন করে থাকেন। এছাড়াও, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং ধর্মযাজকদের নিরাপত্তার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক ঝুঁকি পর্যালোচনা ও অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, বড় দিন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার থেকে সারাদেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
র্যাব ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গির্জা, উপাসনালয়সমূহ ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান স্থলে প্রয়োজনীয় স্যুইপিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। যে কোন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাব স্পেশাল ফোর্স-এর কমান্ডো টীমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
যেকোন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে চার্চ ও গির্জাসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সমূহে চেকপোস্ট স্থাপন, পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন এবং সাদা পোষাকে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। সকল মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরসমূহে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
চক্রান্তকারী/উস্কানীদাতা এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিষয়ে আগাম তথ্য সংগ্রহপূর্বক নাশকতামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও যে কোন ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে কাজ করছে র্যাব।
ভার্চুয়াল জগতে যেকোন ধরনের গুজব/মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে। যারা সাইবার জগতে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দেয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা করবে তাদেরকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ গির্জা, উপাসনালয় ও অনুষ্ঠানস্থলে অপতৎপরতাকারীদের নাশকতামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে বড়দিন উদযাপন কমিটি কর্তৃক সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও বড়দিন উদযাপন কমিটি কর্তৃক নিয়োগকৃত স্বেচ্ছাসেবক এবং কর্তব্যরত র্যাব সদস্যদের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোন দুষ্কৃতকারী গির্জা ও অনুষ্ঠান এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্যাটলিয়নসমূহ নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাথে সমন¦য় করে কাজ করছে। র্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের (কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নাম্বারঃ ০১৭৭৭৭২০০২৯) মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে। বড়দিনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে কেউ নাশকতার চেষ্টা করছে এমন কোন তথ্য আপনারা পেলে সে সম্পর্কে র্যাবকে অবহিত করুন।
বড়দিন এর উৎসবকে কেন্দ্র করে চক্রান্তকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে জনস্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপ নিতে না পারে তার জন্য কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব।
বড়দিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহ বিশেষ করে ঢাকার বনানী, গুলশান, উত্তরা, পূর্বাচল, ৩০০ ফিট, হাতিরঝিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের অভিজাত হোটেল ও ক্লাবগুলোতে এবং কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের আড়ালে অশ্লীল কর্মকান্ড, ইভটিজিং ও মহিলাদের শ্লীলতাহানীর ঘটনা রোধকল্পে বড়দিন উদযাপন কমিটিগুলোসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয়করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বঙ্গভবন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার অফিস এবং গণভবনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কেপিআই এর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
বড়দিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে পটকা, আতশবাজিসহ আগুন দ্বারা পরিচালিত ফানুস উড়ানো যাবে না। আতশবাজি বা পটকা ফুটানো বা ফানুস উড়ানো বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এমআইকে/ক.ম
