উপদেষ্টা পরিষদের আজকের (বুধবার) বৈঠকে টেলিকমিউনিকেশন অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
বিজ্ঞাপন
শফিকুল আলম বলেন, ‘আজকের উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত দুটি বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ছিল সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন। এছাড়া আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া রিভাইজ বাজেট কার্যক্রম সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘নতুন সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। শীতকালে সবজি মূল্যের উত্থান কমে যাওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের কাছাকাছি নামার আশা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের শেষে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি হবে। রাজস্ব আহরণ গত বছরের তুলনায় ২৬.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে সংশোধিত বাজেটে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ‘সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা প্রাক জিডিপির ৩.৩ শতাংশ। মোট সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক এবং ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পূরণ হবে। চিফ অ্যাডভাইজারের নির্দেশনায় বাজেটে স্বনির্ভরতা ও সেলফ রিলায়েন্স বাড়ানো, কোয়ালিটি এডুকেশন, রুরাল ডেভেলপমেন্ট, তরুণ ও নারীর ক্ষমতায়ন, স্থানীয় উৎপাদন ও স্বাস্থ্য খাতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক ও যুবক-উপযোগী করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে, দেশের টেলিকমিউনিকেশন ও ইন্টারনেট অবকাঠামো স্থিতিশীল ও নিরাপদ থাকবে। অধ্যাদেশে বিটিআরসির ক্ষমতা, কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা সুসংহত করা হয়েছে। গ্রাহকের তথ্য গোপনীয়তা নিশ্চিত করা এবং প্রতারণা ও অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, অধ্যাদেশে সিআইএস (ঈবহঃবৎ ভড়ৎ ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ) নামে একটি কারিগরি প্লাটফর্ম গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি জাতীয় তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা সংক্রান্ত মানদণ্ড অনুসরণ করে পরিচালিত হবে। এছাড়া ল মিনিস্টারকে দেওয়া হয়েছে একটি কাউন্সিল গঠনের অধিকার, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয় দেখবে।
শফিকুল আলম বলেন, নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিটিআরসি কার্যকরভাবে কাজ করবে। দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো সুরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। নতুন অধ্যাদেশ দেশকে আধুনিক, নিরাপদ ও প্রতিযোগিতামূলক টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নেবে। সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাধান্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ক্যাবিনেটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচিত হয়েছে। এ আলোচনায় স্থানীয় উৎপাদন, যুব ও নারীর ক্ষমতায়ন, কোয়ালিটি এডুকেশন, রুরাল ডেভেলপমেন্ট এবং স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিও ছিল।
প্রেস সচিব বলেন, অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্টবান্ধব ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন মানদণ্ড এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নতুন অধ্যাদেশের ফলে দেশব্যাপী টেলিকমিউনিকেশন সেবা আধুনিক, নিরাপদ ও জনমুখী হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা, ডিজিটাল অবকাঠামোর সুরক্ষা, গ্রাহকের তথ্য গোপনীয়তা এবং সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সুস্পষ্ট আইনগত ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে, যা দেশের টেলিকমিউনিকেশন খাতকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করবে।’
এএইচ/এএইচ

