মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গণমাধ্যম ও ছায়ানটে হামলা: ৭ আন্তর্জাতিক সংগঠনের নিন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১০ এএম

শেয়ার করুন:

গণমাধ্যম ও ছায়ানটে হামলা: ৭ আন্তর্জাতিক সংগঠনের নিন্দা
গণমাধ্যম ও ছায়ানটে হামলা: ৭ আন্তর্জাতিক সংগঠনের নিন্দা। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে সহিংস হামলা এবং সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটে ভাঙচুরের ঘটনায় কঠোর নিন্দা জানিয়েছে সাতটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।

সংগঠনগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), অনলাইনে নাগরিক অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন অ্যাকসেস নাউ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন, সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি), জার্নালিস্টস ফর ডেমোক্রেসি ইন শ্রীলঙ্কা (জেডিএস) এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই)।


বিজ্ঞাপন


১৮ ডিসেম্বর এসব প্রতিষ্ঠানে হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো জানায়, এসব সমন্বিত সহিংস কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে স্বাধীন গণমাধ্যম, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও সাংস্কৃতিক পরিসরের বিরুদ্ধে হামলা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরেছে।

একই রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা ও পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাতেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর এসব ঘটনা ঘটে। ১২ ডিসেম্বর রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন তিনি এবং ১৮ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজনীতিবিদ, অধিকারকর্মী, শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা, বিশেষ করে ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা বাড়ার প্রেক্ষাপটে, আইনের শাসনের অবক্ষয় এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক আলোচনা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের পরিসর সংকুচিত হয়ে আসার গুরুতর ইঙ্গিত দেয়।

আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো জানায়, যাচাইকৃত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, হামলার সময় দুটি সংবাদমাধ্যমের জ্বলন্ত ভবনের ভেতরে সাংবাদিক ও কর্মীরা আটকা পড়েছিলেন এবং তাঁদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়া নাগরিকদের জীবন রক্ষায় রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোর ছাপা ও অনলাইন সংস্করণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হওয়াকে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যা স্বাধীন সাংবাদিকতা কতটা বড় হুমকির মুখে পড়েছিল তা স্পষ্ট করে।


বিজ্ঞাপন


বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের হয়রানি ও শারীরিক আঘাতের হুমকি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে চাওয়া গোষ্ঠীগুলোর বেপরোয়া আচরণ এবং রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার ঘাটতির বিষয়টি প্রকাশ করে।

ছায়ানটে হামলার ঘটনাকে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি বৈরিতার একটি বৃহত্তর প্রবণতার অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে শিল্পীসত্তার প্রকাশ ও মতের বৈচিত্র্যের জন্য ক্রমেই অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করা হয়েছে। বিবৃতিতে অনলাইন ও অফলাইন সহিংসতার একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকেও ইঙ্গিত করা হয়, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত হয়রানি এবং রাষ্ট্রসমর্থিত নজরদারির চর্চা। এসবের ফলে দায়মুক্তির একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করা হয়।

আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো জানায়, চলতি বছরজুড়ে আইনি ব্যবস্থার অপব্যবহার করে চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত, বাউল, সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী ও শিল্পীদের ভয়ভীতি দেখানো এবং তাদের ওপর হামলার ধারাবাহিকতা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে।

এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর