রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দেশের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান কার্যালয়ে পরিকল্পিত হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিকভাবে এতে অন্তত ৪০ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন শাখার প্রধান মিজানুর রহমান তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা ২৫ মিনিটে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে মিছিলসহ ডেইলি স্টার কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়। ঘটনার আগে কয়েকজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে হামলার নির্দেশনা দেয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী হামলাকারীরা ভবনের স্টিল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
হামলাকারীরা কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানরত সাংবাদিক ও কর্মীদের মারধরের চেষ্টা করে এবং আসবাবপত্র, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম ধ্বংস করে। ভবনের নিচতলা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া চতুর্থ থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ সময় ডেইলি স্টারের বিভিন্ন ফ্লোরের দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও ইকুইপমেন্টসহ নানা ইলেকট্রনিক ডিভাইস লুট ও ধ্বংস করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিভিন্ন লকারে সংরক্ষিত প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়।
এছাড়া ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম, লিফট ও বৈদ্যুতিক লাইনে মারাত্মক ক্ষতি করা হয়। এমনকি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোর চেষ্টাও চালানো হয়। হামলার সময় সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ও ডিভিআর ভেঙে ফেলা হয়। অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে আসা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাজে বাধা দেওয়া হয় এবং তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়লে ভোর আনুমানিক সাড়ে চারটার দিকে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় ডেইলি স্টারের প্রকাশনা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ফলে গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) পত্রিকাটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি এবং অনলাইন কার্যক্রম প্রায় ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৈশ্যণ্যু মারমা জানান, মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই হামলার ঘটনায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
একেএস/

