উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও সুফি চিন্তাবিদ হজরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.) স্রষ্টার সৃষ্টি জগৎকে দেখেছিলেন এক অভিন্ন পরিবার হিসেবে। তাঁর মতে, স্রষ্টার একত্বে বিশ্বাস মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে এবং মানবিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে। তাঁর প্রণীত ‘বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব’ দর্শন মানুষে মানুষে সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে নৈতিকতা, সহমর্মিতা, সহনশীলতা ও নিঃস্বার্থ সেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সেমিনার হলে আহছানউল্লা সেন্টার ফর ইউনিভার্সাল হিউম্যানিটির আয়োজনে "বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব: দর্শন ও কর্মকৌশল” শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একথা বলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও নৈতিকতার সমন্বয় ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নাগরিকের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে পারলে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাম ক্লাব ২৫-এর উপদেষ্টা ড. কাজী এম. এহছানুর রহমান।
তিনি বলেন, খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.)-এর বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ভাবনা ছিল স্রষ্টার এককত্বে পূর্ণ বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত, যেখানে তিনি সমগ্র সৃষ্টিকে একই পরিবারের অংশ মনে করতেন এবং মানুষে মানুষে, এমনকি জীব ও জড়ের মধ্যে ভেদাভেদ না করে সার্বজনীন ভালোবাসা ও সেবার ওপর জোর দিতেন, যা ‘সৃষ্টির সেবা’ এবং ‘মানবতার ধর্ম’ ধারণার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি মনে করতেন, স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা থাকলে বিশ্বে শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব, যা তাঁর দর্শন ও শিক্ষার মূল ভিত্তি ছিল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
এসময় তিনি বলেন, খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.) তাঁর জীবন ও কর্মের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উন্নয়নের কথা বলেছেন, যেখানে শিক্ষা, নৈতিকতা, পল্লী উন্নয়ন এবং স্রষ্টার নৈকট্য লাভের মাধ্যমে আত্ম-উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন; তিনি ‘ভয়, শ্রদ্ধা ও প্রেম’ এর সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেকে গড়ে তোলার কথা বলেছেন এবং তরুণদের জন্য তাঁর জীবন আদর্শকে পাথেয় হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখী গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.)-এর বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ভাবনা বিষয়ক আলোচনা করেন খানবাহাদুর আহছানউল্লা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আলহাজ্ব এ এফ এম এনামুল হক, সেইন্ট যোসেফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল ব্রাদার ভিক্টর বিকাশ ডি রোজারিও, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিলটন কুমার দেব। এসময় উন্মুক্ত আলোচনা করেন আহছানউল্লা সেন্টার ফর ইউনিভার্সাল হিউম্যানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল মাসুদ।
এসময় আলোচকরা বলেন, খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.) তাঁর সমগ্র চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে একটি আলোকিত সমাজ গঠনের চেষ্টা করেছেন। তিনি কখনো গোঁড়ামির কথা বলেননি। তাঁর সমাজচিন্তায় মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টির সেবা’। স্রষ্টার এবাদত করতে হলে আগে সৃষ্টির সেবা করতে হবে। তিনি ভয়, শ্রদ্ধা এবং প্রেম এই তিনটির সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেকে গড়ে তোলার কথা বলেছেন। তারা আরও বলেন, খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.)’র জীবনধারার প্রতিটি বাঁকে যে অফুরান সমৃদ্ধি, সমারোহ ও সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটেছিল, তা যথার্থ নিরূপণ করা সম্ভব হলে ইতিহাসের অনেক অজানা কাহিনী উদ্ধার হতো। তাঁর জীবনভিত্তিক অনেক ঐতিহাসিক সত্যের তেমন মজবুত মিমাংসা হয়নি। তবু তাঁর বিশাল বর্ণিল জীবনধারার কাছে আমাদের ঋণ ও কাতরতার কোনো শেষ নেই।
এমআইকে/এআর

