আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস–২০২৫ উপলক্ষে ঢাকায় জ্ঞান, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির মিলনমেলায় পরিণত হয় আলজেরিয়া দূতাবাস প্রাঙ্গণ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকাস্থ আলজেরিয়ার দূতাবাস-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে কূটনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির নানা অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে আরবি ভাষার ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নতুনভাবে আলোচিত হয়।
অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী নেতা, ইসলামী চিন্তাবিদ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরবি ভাষার ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দেলৌহাব সাইদানী এবারের প্রতিপাদ্য—‘আরবি ভাষা: নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের যুগ—চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’—এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আরবি ভাষা কেবল একটি ভাষা নয়; এটি একটি সমৃদ্ধ সভ্যতার বাহক, যা যুগে যুগে বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য ও কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এসেছে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর এই সময়ে আরবি ভাষার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে ভাষাগত সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ভারসাম্যের ওপর। এ লক্ষ্যে আলজেরিয়া আরবি ভাষা শিক্ষা জোরদার, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন ও ভাষাগত গবেষণা উৎসাহিত করা, সাহিত্য ও অনুবাদ কার্যক্রমে সহায়তা এবং একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্প্রসারণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন। তিনি আরবি ভাষাকে সভ্যতা ও বিশ্বাসের ভাষা হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ঐতিহাসিক যাত্রা ও সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৪ সালে তৎকালীন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি হুয়ারি বুমেদিন ফিলিস্তিনি প্রশ্নে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক বিশেষ অধিবেশনে আরবি ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন—যা জাতিসংঘে আরবি ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। একই সঙ্গে তিনি ডিজিটাল যোগাযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অনলাইন শিক্ষার যুগে আরবি ভাষার সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের সম্পৃক্ততা ও ডিজিটাল কনটেন্টে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল আলজেরিয়ার চারজন শিশু শিক্ষার্থীর প্রাঞ্জল বক্তব্য। তাদের কণ্ঠে আরবি ভাষার গুরুত্ব ও সৌন্দর্যের উপস্থাপনা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়, যেখানে আরবি ভাষার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার ও ডিজিটাল যুগে এর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠান শেষে বক্তারা বলেন, আরবি ভাষা শুধু অতীতের ঐতিহ্য নয়; এটি জ্ঞান, সংলাপ ও উদ্ভাবনের একটি জীবন্ত মাধ্যম। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আলজেরিয়া দূতাবাস আবারও প্রমাণ করেছে—ঐতিহ্যের শিকড়ে দৃঢ় থেকেও আরবি ভাষা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যেতে সক্ষম।
এমআর/এআর

