গণহারে জামিন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় একশ্রেণির আইনজীবীর পক্ষ থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদের জামিনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি এ কথা জানান।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে জামিন প্রক্রিয়া, বিচারিক বিবেচনা ও তথাকথিত ‘জামিন বাণিজ্য’ নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও অভিযোগ তুলে ধরেন আসিফ নজরুল।
পোস্টে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘ফয়সাল করিম মাসুদকে গত বছর র্যাব গ্রেফতার করলেও পরে তিনি হাইকোর্ট থেকে অস্ত্র মামলায় জামিন পান।’
অস্ত্র মামলায় হাইকোর্ট থেকে সহজে জামিন পাওয়ার কথা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী আইনজীবীদের ভূমিকা থাকলেই এমন জামিন সম্ভব হয়। অভিযোগ রয়েছে, বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কিছু শীর্ষ আইনজীবীর প্রভাবেই এসব মামলায় জামিন সহজতর হয়।’
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, ‘হাইকোর্ট বিচারিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান এবং সেখানে প্রদত্ত জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্বের কোথাও আইন মন্ত্রণালয়ের হাইকোর্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই, বাংলাদেশেও নেই।’
হাইকোর্টের জামিন প্রদানে বিচারিক বিবেচনার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আসিফ নজরুল।
আরও পড়ুন: কওমি আলেমদের ‘সুখবর’ দিলেন আসিফ নজরুল
উদাহরণ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কয়েক মাস আগে তিনি প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন— কীভাবে একটি হাইকোর্ট বেঞ্চে মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছিল। এই প্রশ্ন তোলার জেরেই একশ্রেণির আইনজীবী তার পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করেছিলেন।
তিনি বলেন, জামিন পাওয়ার সুযোগ আইনেই রয়েছে। তবে যেসব ক্ষেত্রে অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্তের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত স্পষ্ট, অভিযুক্ত ব্যক্তি চিহ্নিত সন্ত্রাসী কিংবা জামিন পেলে পুনরায় অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকে— সে ধরনের ক্ষেত্রে জামিন দেওয়া অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত।
গত ১৬ মাসে নিম্ন আদালত থেকেও কিছু বিতর্কিত জামিন হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সেসব মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে— অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগপত্রে আসামির অপরাধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, এমনকি দলীয় পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়নি।
এরপরও বিচারিক বিবেচনা ছাড়াই জামিন দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলে জানান আসিফ নজরুল।
জামিন বাণিজ্যে জড়িতদের কঠোর ভাষায় সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘জামিন বাণিজ্যে যারা লিপ্ত আছেন, এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপণ্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দেবেন না।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এক গণহত্যাকারী পাশের দেশে বসে জুলাইয়ের বীরদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে—এমন পরিস্থিতিতে বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিলে সেই শক্তিকেই সুযোগ করে দেওয়া হবে।’
পরকালে এর দায় নিতে হবে বলেও সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেন আইন উপদেষ্টা।
টিএই/এএইচ

