বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল 

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল 
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের উৎসব প্রাণবন্ত করে তুলেছে জনতার উপস্থিতি। ছবি: ঢাকা মেইল

বেলা যত গড়াচ্ছে, ততই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমে উঠছে মানুষের ঢল। রোদ আর হালকা শীতের মিশ্রণে বিকেলের হাওয়ায় ভেসে আসছে গান, করতালি আর উচ্ছ্বাস। লাল-সবুজের পতাকা হাতে, কাঁধে ব্যাগ, চোখে অপেক্ষার ঝিলিক নিয়ে একের পর এক তরুণ-তরুণী প্রবেশ করছেন উদ্যানে। বিজয় দিবসের উৎসব এভাবেই প্রাণবন্ত করে তুলেছে জনতার উপস্থিতি।  

উদ্যানের মূল ফটক থেকে ভেতরের মাঠ—সবখানেই তরুণদের সরব উপস্থিতি। কেউ দল বেঁধে এসেছে বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ এসেছে প্রিয় ব্যান্ডের গান শুনতে, আবার কেউ শুধু উৎসবের আবহ অনুভব করতে। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কারও গায়ে লাল-সবুজের টি–শার্ট, কারও কপালে বিজয়ের রঙ। মোবাইল ফোনে ছবি তোলা, সেলফি, লাইভ ভিডিও—সব মিলিয়ে পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে এক প্রাণবন্ত মিলনমেলায়।


বিজ্ঞাপন


বিকেলের দিকে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। মঞ্চের সামনে জায়গা নিতে তরুণরা আগেভাগেই অবস্থান নিচ্ছে। কেউ বসে আছে ঘাসে, কেউ দাঁড়িয়ে গল্পে মেতে উঠেছে। উৎসবের এই অপেক্ষার সময়টুকুও যেন তাদের কাছে উপভোগ্য। মাঝে মাঝে ভেসে আসা সাউন্ড চেকের শব্দে উচ্ছ্বাস বাড়ে, করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। 

IMG_20251216_145743
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের উৎসব প্রাণবন্ত করে তুলেছে জনতার উপস্থিতি। ছবি: ঢাকা মেইল 

 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক কোণে পতাকা বিক্রেতা, ব্যাজ আর লাল-সবুজের নানা সামগ্রীর দোকানগুলোতেও ভিড়। তরুণদের অনেকেই ব্যাজ কিনে সঙ্গে সঙ্গে শার্টে লাগিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ ছোট পতাকা কিনে হাতে নিয়ে ঘুরছে। বিজয় দিবস তাদের কাছে শুধু স্মরণ নয়, নিজেদের প্রকাশেরও একটি দিন।


বিজ্ঞাপন


সূর্য ঢলতে শুরু করলে আলোর রঙ বদলায় উদ্যানে। তখন ভিড় আরও ঘনীভূত হয়। তরুণ-তরুণীদের হাসি, কথা আর উচ্ছ্বাসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। ইতিহাসের এই মাঠে দাঁড়িয়ে তারা গড়ে তোলে নিজেদের সময়ের গল্প—গান, বন্ধুত্ব আর স্বাধীনতার আনন্দে ভরা এক বিকেল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তানভীর বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এলে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে। ইতিহাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করতে পারাটা গর্বের। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধু নীলা যোগ করেন, বন্ধুদের সঙ্গে গান শোনা, পরিবেশটা উপভোগ করা—এটাই তো বিজয়ের আনন্দ।

তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, আজ এখানে আসার কোনো প্ল্যান ছিল না। হঠাৎ বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ি। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকেই মনটা বদলে গেল। এত মানুষের ভিড়, এত তরুণ মুখ—সব মিলিয়ে আলাদা শক্তি পাওয়া যায়। আমরা অনেক সময় ইতিহাসকে বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ রাখি। অথচ এই জায়গায় দাঁড়ালে বোঝা যায়, ইতিহাস আসলে জীবন্ত। বিজয় দিবস মানে শুধু ছুটি বা কনসার্ট নয়, নিজের জায়গা আর পরিচয়টা নতুন করে ভাবার সুযোগ। 

IMG_20251216_145617
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের উৎসব প্রাণবন্ত করে তুলেছে জনতার উপস্থিতি। ছবি: ঢাকা মেইল 

 

দেখা হয় গ্রাফিক ডিজাইনার মাহিন তাসনিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি মূলত ছবি তুলতেই এসেছি। লাল-সবুজের রং, মানুষের মুখের এক্সপ্রেশন—সবকিছু খুব শক্ত ভিজ্যুয়াল তৈরি করে। বিজয় দিবসের দিনে তরুণদের এমন জমায়েত আমাকে অনুপ্রাণিত করে। এখানে কেউ কাউকে চেনে না, তবু সবাই এক অনুভূতিতে যুক্ত। স্বাধীনতা মানে আমার কাছে নিজের মতো করে ভাবতে পারা, প্রকাশ করতে পারা।

রাজধানীর একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাজিদ আহমেদ। তিনি বলেন, অনেক বছর পর বিজয় দিবসে এভাবে বের হওয়া হলো। চাকরির ব্যস্ততায় দিনগুলো কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে যায়। আজ এখানে এসে মনে হলো, আমরা এখনো একসঙ্গে হতে পারি। তরুণদের ভিড় দেখে ভালো লাগছে, কারণ তারাই ভবিষ্যৎ। তবে আমি চাই, এই উৎসবের পাশাপাশি আমরা যেন দেশের জন্য কী করছি সেটাও ভাবি। বিজয়ের আনন্দ তখনই পূর্ণ হবে, যখন দায়িত্বের জায়গাটাও ঠিক থাকবে।
 
এএইচ/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর