বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে একাত্তরের বিজয়ের সকাল

মাহফুজুর রহমান
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

একজন মুক্তিযোদ্ধার চোখে বিজয় দিবসের স্মৃতি
একাত্তরের প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল হালিম। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ঢাকা শহরের বাতাসে তখন বিরামহীন উত্তেজনা, আর মানুষের চোখেমুখে অগাধ আনন্দ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অবশেষে আসে কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের দিন—যে দিনটিকে আজ আমরা বিজয় দিবস হিসেবে উদযাপন করি।

সেই দিনের স্মৃতি আজও স্পষ্ট একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে। তার নাম আব্দুল হালিম। তিনি কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে। তিনি বলেন, “সকাল থেকেই শহরটা যেন অন্যরকম লাগছিল। মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। হাতে হাতে পতাকা, কেউ নাচছে, কেউ আনন্দে কাঁদছে। আনন্দ, মুক্তির উল্লাস আর অতীতের কষ্ট—সব মিলেমিশে এক অদ্ভুত অনুভূতি।”


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, বিজয়ের উচ্ছ্বাসের মাঝেও মানুষ জানত—এই স্বাধীনতা সহজে আসেনি। “আমরা জানতাম, এই বিজয়ের পেছনে কত ত্যাগ। কিন্তু সেই মুহূর্তে সব ভয় যেন মিলিয়ে গিয়েছিল। মানুষের চোখে যে উচ্ছ্বাস দেখেছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।”

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আব্দুল হালিম তুলে ধরেন যুদ্ধদিনের পারস্পরিক সহমর্মিতার কথা। বলেন, “সেই সময় আমরা একে অপরের ঘরে আশ্রয় নিতাম, খাবার ভাগ করে খেতাম। যুদ্ধের খবর জানার জন্য সবাই মিলে রেডিওর পাশে বসতাম। ছোট ছোট এই কাজগুলোই আমাদের সাহস জুগিয়েছে।”

বিজয়ের মুহূর্তটির কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখেমুখে আবারও উজ্জ্বলতা। “যখন চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা এলো, আমরা সবাই একসঙ্গে গান গাইছিলাম, কাঁদছিলাম, আনন্দে নাচছিলাম। পুরো শহর যেন উৎসবে মেতে উঠেছিল। তখনই বুঝলাম—আমরা সত্যিই স্বাধীন।”

আজও সেই দিনটিকে জীবনের সবচেয়ে অমূল্য অধ্যায় বলে মনে করেন তিনি। “আমরা যা দেখেছি, তা চিরস্মরণীয়। বিজয় শুধু একটি রাজনৈতিক অর্জন নয়; এটি আমাদের আত্মার বিজয়। এই অর্জনের মূল্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”


বিজ্ঞাপন


সাক্ষাৎকারের শেষে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তাঁর বার্তা স্পষ্ট। “ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। বিজয় শুধু অর্জন করলেই হয় না, তা রক্ষা করতেও হয়। নতুন প্রজন্মকে এই ইতিহাস জানতে হবে, ধারণ করতে হবে।”

মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষদর্শীর স্মৃতিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে—১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কেবল একটি দিনের উদযাপন নয়। এটি সংগ্রাম, সাহস আর মানুষের ঐক্যের প্রতীক। সেদিন ঢাকা শহরের প্রতিটি গলি, প্রতিটি মানুষ দেখেছিল একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন—যে স্বপ্ন আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।

এম/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর